কোরবানির নিয়ম কানুন
কুরবানী নিয়ম কানুন এবং কুরবানী কার উপর ফরজ? কুরবানী দেওয়ার সঠিক নিয়ম এবং
কিভাবে পশু কুরবানি দেওয়া লাগে সেই সম্পর্কে আজকে উত্তর দিলাম । তবে আমার
লেখাতে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই বড় কোন মাওলানার কাছে থেকে জেনে
নিবেন ।
কুরবানী দেওয়ার সঠিক নিয়ম
১। যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখ সূর্যদয়ের পর থেকে দুপুর হওয়া আগ পর্যন্ত সমস্ত
এলাকার অধিবাসীদের কোন বড় জায়গায় একত্রিত হয়ে ঈদুল আযহার দুই রাকাআত ছালাত আদায়
করত হয় ।
২। ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করা প্রত্যেক বালিগ পুরুষের জন্য ওয়াজিব ।
৩। যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখ ঈদুল আযহার ছালাতের পর পশু কুরবানী করা সাহিবে
নিসাবের ওপর ওয়াজিব ।
৪। পশু কুরবানী এমন ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হয় যিনি সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, বালিগ ও
মুকিম, যার মালিকানায় একান্ত প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা
কিংবা তার সমমূল্যের সম্পদ রয়েছে ।
৫। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অর্থ-সম্পদ এক বছর সাহিবে নিসাবের মালিকানাধীন থাকা
জরুরী, কিন্তু কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য অর্থ-সম্পদ এক বছর তার মালিকানাধীন থাকা
জরুরী নয় ।
৬। যার ওপর পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয় তিনি যদি কুরবানীর নিয়াতে পশু ক্রয় করেন
তখন তার জন্য পশু কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায় ।
৭। পশু কুরবানী প্রত্যেক বছরই ওয়াজিব ।
৮। পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে উপার্জন করে সাহিবে নিসাব হলে প্রত্যেকের ওপরই
কুরবানী ওয়াজিব ।
৯। কুরবানীর দিন সাহিবে নিসাব যদি পশু কুরবানী না করে নগদ টাকা মিসকীনদেরকে দিয়ে
দেন, এতে তার ওয়াজিব আদায় হবে না ।
১০। কিন্তু কোন কারণে যদি কুরবানির দিনগুলোতে কুরবানী করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাহলে
পরবর্তী সময়ে পশুর সমমূল্যের টাকা মিসকিনদেরকে দান করে দেওয়া ওয়াজিব ।
১১। যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব তাকে নিজের নামেই কুরবানী করতে হবে । এতদসংগে সম্ভব
হলে অন্যের নামে কুরবানী করতে হবে ।
১২। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মাহাতুল মুমিনীন ও মৃত আত্মীয়-স্বজনের নামে
কুরবানী করা জায়েয ।
১৩। যিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কুরবানী করা যায় । তবে প্রথম দিন কুরবানী
করা উত্তম ।
১৪। রাতেও পশু কুরবানী করা যায় । তবে দিনে কুরবানী করা উত্তম ।
কুরবানীর পশুর বয়স
১৫। ভেড়া ও ছাগল এক নামে কুরবানী করতে হয় ।
১৬। গরু, মহিষ ও উট সর্বচ্চ সাত নামে কুরবানী করা যায় ।
১৭। কুরবানীর ছাগল পূর্ণ এক বছর বয়সী হতে হবে ।
১৮। ভেড়া আকার আকৃতিতে এক বছরের ভেড়ার সমান হলে এক বছরের কিছু কম বয়সী হলেও
কুরবানী করা যায় ।
১৯। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছর বয়সী হতে হবে ।
২০। উট কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে ।
কোরবানির পশু কেনার নিয়ম
২১। জন্মগতভাবে শিং নেই কিংবা শিং ওঠার পর মাঝখানে ভেংগে গেছে এমন পশু কুরবানী
করা জায়েয ।
২২। শিং গোঁড়া থেকে ভেংগে গেছে ও তার প্রভাব মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছে গেছে এমন পশু
কুরবানী করা জায়েয নেই ।
২৩। কানা ও লেংড়া পশু কুরবানী করা জায়েয নেই ।
২৪। রুগ্ন ও দুর্বল পশু যা কুরবানীর স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না, তা কুরবানী
করা জায়েয নেই ।
২৫। যেই পশুর দাঁত নেই কিংবা বেশিসংখ্যক দাঁত নেই এমন পশু কুরবানি জায়েয নেই ।
২৬। এক-তৃতীয়াংশের বেশি লেজ, কিংবা কান ইত্যাদি নেই এমন পশু কুরবানী করা জায়েয
নেই ।
২৭। যেই পশুর জন্মগতভাবেই কান নেই তা কুরবানী করা জায়েয নেই ।
পশুর পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় ঐ পশু কুরবাণী করা যাবে কি?
২৮। পশুর পেটে বাচ্চা থাকলেও পশু কুরবানী করা জায়েয ।
২৯। পশুর পেটের বাচ্চা জীবিত থাকলে তাও যবাই করতে হবে । এই বাচ্চার গোশত খাওয়া
জায়েয ।
৩০। পশুর পেটের বাচ্চা মৃত হলে ফেলে দিতে হবে, খাওয়া যাবে না ।
কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া
৩১। পশু যবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে
।
৩২। নিজের হাতে পশু কুরবানী করতে হবে । নিজে সক্ষম না হলে অন্যকে দিয়ে যবাই করানো
জায়েয ।
৩৩। যবাইর জন্য পশুকে কিবলামুখী করে শোয়ানো মুস্তাহাব ।
৩৪। যবাইকৃত পশু মরে স্থির না হওয়া পর্যন্ত তার চামড়া ছাড়ানো উচিৎ নয় ।
৩৫। মনে মনে কুরবানীর নিয়াত করাই যথেষ্ট । মুখে উচ্চারণ করা জরুরূ নয় ।
কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয়
৩৬। কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে গোশত ওজন করে সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে । অনুমানের
ভিত্তিতে ভাগ করা যাবে না ।
৩৭। কুরবানীর গোশত বিক্রয় করা জায়েয নেই ।
৩৮। গোশত বানানোর পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয নেই ।
৩৯। কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের
মধ্যে বল্টন করা ও এক ভাগ মিসকীনদেরকে দেওয়া উত্তম । তবে পরিবারের সদস্য সংখ্যা
বেশি হলে সব গোশত নিজের রেখে দেওয়াও জায়েয ।
৪০। কুরবানীর পশুর চামড়া গোশত বানানোর পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নেই ।
৪১। কুরবানীর পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করা যায় অথবা কাউকে দান করা যায় । কিন্তু
বিক্রয় করলে টাকা অবশ্যই দান করে দিতে হবে ।
৪২। যাকাত ও ফিতরার টাকার মতো কুরবানী পশুর চামড়া টাকা মাসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে
ব্যয় করা জায়েয নেই ।
তথ্যসূত্রঃ আপনাদের প্রশ্নের জাওয়াব , আল্লামা মুহাম্মাদ ইউসুফ
লুধিয়ানাবী ।