পারিবারিক আইন - বিবাহ ও তালাক

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন ২০২৩ – Muslim Marriage and Divorce Act 2023

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২১, মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ pdf, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২০, ভারতীয় মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ, বিবাহ আইন ২০২২, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২১, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২২, মুসলিম আইন pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ pdf, বিবাহ আইন ২০২২, বাংলাদেশের বিবাহ আইন ২০২১, মুসলিম বিবাহ আইন ১৯৭৪ বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২১, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন ১৯৬১ pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২১, মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ pdf, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২০, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২০ pdf, মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম, হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২১, ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে, কি কি কারনে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, একতরফা তালাক, আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাই, স্ত্রী তালাক দেওয়ার নিয়ম,

Table of Contents

পারিবারিক আইন বাংলাদেশে

বাংলাদেশে ধর্মীয় দিক থেকে বেশির ভাগ মানুষই মুসলিম, তার পরে হিন্দু, তার পরে
খ্রিস্ট্রান এবং বৌদ্ধ। পারিবারিক আইনে দেখা যায় মুসলিম এবং হিন্দুই অনুসরণ করে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৯ অনুচ্ছেদের কারনে ব্রিটিশ আমলে তৈরি অনেক আইনগুলো
বাংলাদেশে কার্যকর। বাংলাদেশে মুসলিম শরিয়া আইন ১৯৩৭ কার্যকর থাকার কারণে
মুসলিমদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে থাকে।
মুসলিম পারিবারিক আইনগুলোর মধ্যে সরকার প্রণীত কিছু বিশেষ আইন-
  • মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১
  • মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন ১৯৭৪
  • মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৭
  • ওয়াকফ অধ্যাদেশ ১৯৬১

মুসলিম পারিবারিক বিষয়গুলো হলো

  1. বিবাহ
  2. মোহরানা
  3. বিবাহ বিচ্ছেদ
  4. ইদ্দত
  5. ভরপোষণ
  6. অভিভাবকত্ব
  7. হেবা
  8. ওয়াকফ
  9. উত্তরাধিকার

বাংলাদেশি নাগরিকের বিবাহ ও তালাক

বাংলাদেশে বিবাহ নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী হয়ে থাকে, আর সাথে আছে স্পেশাল ম্যারেজ
অ্যাক্ট ১৮৭৭ এই আইনে বিবাহ করতে হলে কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না এই হলফনামা দিতে
হয়, মানে ধর্ম ত্যাগ করতে হয়। আসুন দেখি বিবাহসমূহ এবং তা রেজিস্ট্রেশনের
পদ্ধতি।

মুসলিম বিবাহ

মুসলিম বিবাহের নিয়ম একেবারেই সহজ এবং সরল বর, কনে, আর দুই জন সাক্ষীর প্রয়োজন।
কাজি অফিসে গিয়ে অথবা স্থানীয় যেকোন স্থানে বিবাহ সম্পন্ন করা যায়।
ধর্মীয়ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে কাজি অফিসে রেজিস্ট্রেশন
করাতে হবে, আর কাজি অফিসে বিবাহ হলে সাথে সাথেই কাজি সাহেব তা নিবন্ধন
করবেন। 

মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার

বাংলাদেশে ১৯৩৭ সালের শরীয়া আইনে অনেকগুলো বিষয় মুসলিমদের নিজ ধর্মীয় আইন
অনুযায়ী করার যে বিধান আছে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৯ ক্ষমতা বলে বাংলাদেশে
চলমান এর মধ্যে অন্যতম হলো বিবাহ এবং তালাক। বাংলাদেশের আইনে মুসলিম বিবাহ একটি
দেওয়ানি প্রকৃতির চুক্তির মত। তাই এই চুক্তি বাতিল করা যায় মানে বিবাহবিচ্ছেদ
করা যায় কিন্তু হিন্দুদের বিবাহ চিরদিনের একটি ধর্মীয় কাজ তাই হিন্দু ধর্মে
তালাক দেয়া যায় না। চাইলে বিবাহিত স্ত্রী আলাদা থাকতে পারে মুসলিম বিবাহ চুক্তি
অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে; মুসলিম বিবাহ ও __তালাক (রেজিস্ট্রীকরণ) আইন, ১৯৭৪ এবং
২০০৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী। এই বিবাহ নিবন্ধন একজন নিকাহ রেজিস্টার করে থাকেন
যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা কাজি বলে থাকি।
কাজি হতে হলে মাদ্রাসা লেভেল হতে আলিম পাস ব্যক্তি হতে হবে। তবে কোন মহিলা
মাদ্রাসা শিক্ষিত হলেও কাজি হতে পারবেন না, যদিও এই নিয়ে আপীল বিভাগে মামলা
চলমান আছে। নিকাহ রেজিস্টার কোন সরকারি বেতনভোগী নন। বিবাহের মোহরানার ওপর
ভিত্তি করে উনি রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে থাকেন। সরকারি কোষাগারের মাত্র বাৎসরিক
একটি নাম মাত্র ফি জমা দেন। তবে বালাম বই, অফিস তৈরি সব তার নিজের টাকায় ক্রয়
করতে হয় ।

মুসলিম বিবাহের নিয়মাবলি

সুন্নি এবং শিয়া আইনে বিবাহে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে। এখানে আমরা সুন্নি
এবং প্রচলিত আইনে বিবাহ নিয়ে আলোচনা করবো। প্রচলিত আইনে একটি বিবাহ ও তালাকের
জন্য কিছু শর্ত আছে যা বিভিন্ন আইন ধারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন ২০১৭ সালে বাল্য
বিবাহ নিরোধ আইন, ১৮৭৫ সালের সাবালকত্ব আইন, ১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ্দ আইন,
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ, ১৯৭৪ সালের বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন,
২০০৯ সালের বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী মুসলিম বিবাহ নিবন্ধত হয়।
সুন্নী আইনে বিবাহ তিন প্রকারের বৈধ, অনিয়মিত এবং অবৈধ। শিয়া আইনে দুই
প্রকার-বৈধ এবং অবৈধ।

অবৈধ বিবাহ কি? কাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ

যে বিবাহ কোনভাবে বৈধ হবে না তা সারা জীবনই নিষিদ্ধ।

যাদের বিবাহ করা হারাম বা নিষিদ্ধ

আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা করেন-তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের 
১. মাতা, 
২. তোমাদের কন্যা, 
৩. তোমাদের বোন, 
৪. তোমাদের ফুফু, 
৫. তোমাদের খালা, 
৬. ভ্রাতৃকন্যা; 
৭. ভগিনীকন্যা, 
৮.তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে,
৯. তোমাদের দুধ-বোন,
১০. তোমাদের স্ত্রীদের মাতা,
১১. তোমরা যাদের সঙ্গে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে
আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ
নেই, 
১২. তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং 
১৩. দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ
ক্ষমাকরী, দয়ালু।
১৪.অন্যের বৈধ স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম।

বংশগত সম্পর্কে যারা হারাম

১। আপন জননীদের বিয়ে করা হারাম। এখানে দাদি, নানি সবার ক্ষেত্রে এ বিধান
প্রযোজ্য।
২। স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। এখানে পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী,
প্রদৌহিত্রী তাদেরও বিয়ে করা হারাম।
৩। সহোদরা ভগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। এমনইভাবে বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী
ভগ্নিকেও বিয়ে করা হারাম।
৪। পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (ফুফুকে) বিয়ে করা হারাম।
৫। আপন জননীর সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (খালা) বিবাহ করা হারাম।
ভ্রাতুষ্পুত্রীর সঙ্গেও বিয়ে হারাম, আপন হোক, বৈমাত্রীয় হোক।
০৭. বোনের কন্যা, অর্থাৎ ভাগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। চাই সে বোন সহোদরা,
বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী যেকোনো ধরনের বোনই হোক না কেন, তাদের কন্যাদের বিবাহ
করা ভাইয়ের জন্য বৈধ নয়।

বৈবাহিক সম্পর্কে যারা হারাম

১। স্ত্রীদের মাতাগণ (শাশুড়ি) স্বামীর জন্য হারাম। এতে স্ত্রীদের নানি, দাদি
সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য ।
২। নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের পর সহবাস করার শর্তে ওই স্ত্রীর অন্য স্বামীর
ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করা হারাম। ।
৩। পুত্রবধূকে বিয়ে করা হারাম। পুত্র শব্দের ব্যাপকতার কারণে পৌত্র ও
দৌহিত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে না।
৪। দুই বোনকে বিবাহ মাধ্যমে একত্র করা অবৈধ, সহোদর বোন হোক কিংবা বৈমাত্রেয়ী বা
বৈপিত্রেয়ী বা বৈপিত্রেয়ী হোক, বংশের দিক থেকে হোক বা দুধের দিক থেকে হোক, এ
বিধান সবার জন্য প্রযোজ্য । তবে এক বোনের চূড়ান্ত তালাক ও ইদ্দত পালনের পর
কিংবা মৃত্যু হলে অন্য বোনক্র বিবাহ করা জায়েজ ।

স্তন্যপানজনিত কারণে যাদের বিবাহ করা হারাম

কুরআনে বর্ণিত দুধমাতাও দুগ্ধবোনকে বিবাহ করা হারাম।
দুধপানের নির্দিষ্ট সময়কালে (দুই বছর) কোনো বালক কিংবা বালিকা কোনো
স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে সে তাদের মা এবং তার স্বামী তাদের পিতা হয়ে যায়। এ
ছাড়া সে স্ত্রীলোকের আপন পুত্র-কন্যা তাদের ভাইবোন হয়ে যায়। অনুরূপ সে
স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা হয়ে যায় এবং সে স্ত্রীলোকের ভাশুর ও দেবররা তাদের
কাকা হয়ে যায়। তার স্বামীর বোনরা শিশুদের ফুফু হয়ে যায়। তাদের সবার সঙ্গে
বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়। বংশগত সম্পর্কের কারণে পরস্পর যেসব বিবাহ হারাম
হয়, দুধপানের সম্পর্কের কারণেও সেসব সম্পর্কীয়দের সঙ্গে বিবাহ অবৈধ হয়ে
যায়৷

বংশগত সম্পর্কের মধ্যে যাদের বিবাহ করা হারাম নয়

খালাতো, মামাতো, ফুফাতো বা চাচাতো ভাই-বোন তাদেরকে বিবাহ করা বৈধ। এমনকি, চাচা
মারা গেলে বা তালাক দিয়ে দিলে চাচীকে বিবাহ করার বৈধতাও ইসলাম দিয়েছে।

অনিয়মিত বিবাহঃ

যে বিবাহ বৈধ করার সুযোগ আছে, সময়ের কারণে যে বিবাহ বৈধ বলে বিবেচিত হয়। যেমন
  • চার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ নাম্বার স্ত্রী গ্রহণ করলে।
  • ইদ্দত অবস্থায় বিবাহ করলে।
  • দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করলে।
  • ফুফু ভাতিজি কে একত্রে বিবাহ করলে।
  • অনিয়মিত বিবাহ বৈধ করার সুযোগ থাকে তাই এই অনিয়মিত বিবাহের সময় সন্তান
    বৈধ সন্তানের মর্যাদা লাভ করে।

বৈধ বিবাহঃ

যে বিবাহে যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে ধর্মীয় এবং প্রচলিত আইনে করা হয় তাই বৈধ
বিবাহ। আসুন বৈধ বিবাহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
একটি বৈধ বিবাহের শর্তঃ
  • উভয়ের যোগ্যতা থাকা
  • ইজাব ও কবুল থাকা
  • মোহরানা থাকা
  • ২ জন্য সাক্ষী
  • কোন নিষিদ্ধ সম্পর্ক না থাকা
  • স্বেচ্ছায় বিবাহ সম্পন্ন হওয়া
যোগ্যতা থাকাঃ বিভিন্ন আইনের কারণে বিবাহের কাজে ছেলের বয়স একুশ
বছর এবং মেয়ের বয়স আঠারো হতে হবে। যদিও আমরা জানি ১৮৭৫ সালে সাবালকত্ব আইনে
১৮ বছর হলে ছেলে বা মেয়ে সাবালক, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়ে
মেয়ের বয়স ষোল হলেও বিবাহ বৈধ হতে পারে। যেহেতু একটি একটি চুক্তি তাই বলা
যায় তাদের চুক্তি করার যোগ্যতা থাকতে হবে।
ইজাব ও কবুলঃ বিবাহের জন্য এক পক্ষ অফার করবে এবং অপর পক্ষ সেই
অফার গ্রহণ করবে। যাকে ইজাব এবং কবুল বলে। এটি যেকোন পক্ষ হতে হতে পারে।
সাক্ষীঃ বিবাহের দুইজন সাক্ষী থাকতে হবে তবে এই সাক্ষী যেকোন পক্ষ
হতে হতে পারে। তবে সাক্ষীদের চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা থাকতে হবে। সাক্ষ্য আইনে
যদি মহিলা সাক্ষী হতে পারে তবে মুসলিম আইনে একজন পুরুষ এবং ২ জন মহিলা সাক্ষী
হতে পারে। তবে কোন অবস্থায় সব সাক্ষী মহিলা হতে পারবেন না।
মোহরানাঃ মুসলিম বিবাহে মোহরানা নির্দিষ্ট হতে পারে আবার নাও হতে
পারে। বিবাহের পরেও ঠিক করা যায়। তবে বাস্তবতা হলো যেহেতু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন
করতে হয় এবং নিকাহ রেজিস্টার মোহরানার ওপর ভিত্তি করে বিবাহ নিবন্ধনের ফি নেন
তাই এটি ঠিক করে নিতে হয়। তবে এই মোহরানা নির্ধারণ উভয়ের সামাজিক এবং আর্থিক
দিক বিবেচনা করে করা উচিত।
কোন আইনগত বাধা না থাকাঃ ধর্মীয়ভাবে এবং আইনগত কোন বাধা না থাকা।
নিষিদ্ধ কিছু রক্তসম্পর্ক, যেমন-ভাই বোন, ছেলে-মেয়ে, চাচ-ভাতিজি, মামা ভাগিনি
এদের মাঝে বিবাহ নিষিদ্ধ।
এ ছাড়া একই ধর্মাবলম্বী হওয়া। তবে যদি ছেলেরা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান মেয়েকে
বিবাহ করে তাতে অনুমতি আছে কিন্তু মেয়ে মুসলিম হয়ে মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে
বিবাহ করলে তা অবৈধ হবে। আর বিবাহ উভয়ের স্বেচ্ছায় হওয়া।

নিকাহ রেজিস্ট্রেশন

ধর্মীয়ভাবে বিবাহ সম্পাদনের সাথে সাথে অথবা বিবাহের ত্রিশ দিনের মধ্যে বিবাহ
রেজিস্টারের কাছে গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এটা বরের দায়িত্ব। ৩০
দিনের মধ্যে নিবন্ধন না করলে ২ বছেরর জেল এবং ৩০০০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান
আছে আইনে। বিবাহ যেখানে অনুষ্ঠিত হবে সেই এলাকার কাজি সাহেবের মাধ্যমে
রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ ছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচ বর বহন
করবেন। অনেকেই ধর্মীয় ভাবে বিবাহ না করে শুধু কাবিন করে রাখেন পরে বিবাহ করেন
তবে প্রথমে ধর্মীয়ভাবে বিবাহ করে পরে বা সাথে সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে
হয়। বিবাহ করা বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের কাজি নোটারি পাবলিক বা আইনজবীরি কোন
কাজ নাই। তবে ধর্মীয়ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হলে বর-কনে চাইলে সেই বিবাহ কাজি অফিসে
রেজিস্ট্রেশনের জন্য উকিল নিযুক্ত করতে পারেন।

কাবিননামা রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকা লাগে

কাজি সাহেবের নিবন্ধন ফি মোহরানার ওপর নির্ভর করে। ২০২০ সাল পর্যন্ত যে নিয়ম
তাতে সর্বনিম্ন ফি ২০০টাকা। কাবিনামায় মোহরানা যদি চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়
তাহলে এক প্রকারের এবং এর বেশি হলে অন্য প্রকারে হিসাব করতে হয়। প্রথম চার
লক্ষ টাকা জন্য প্রতি হাজারের বার টাকা পঞ্চাশ পয়সা হিসাবে হিসাব করতে হবে,
মানে প্রতি লাখে ১২৫০ টাকা। তাই বলা যায় মোহরানা চার লাখ টাকা হলে পাঁচ হাজার
টাকা দিতে হবে। যদি চার লাখের বেশি হয় প্রথম চার লাখের হিসাব প্রতি হাজারে
১২৫০ টাকা এবং পরের লাখ বা এর অংশের জন্য একশত টাকা হিসাবে হিসাব করতে হবে।
উদাহারণঃ ১.১ যদি কারো মোহরানা ছয় লাখ টাকা হয় তাহলে তার কাবিন
করতে কত টাকা লাগবে?
প্রথম চার লাখ টাকার জন্য প্রতি হাজারে ১২.৫০ হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা এবং পরের
দুই লাখের জন্য দুইশত টাকা তাহলে মোট পাঁচ হাজার দুইশত টাকা লাগবে।
উদাহারণঃ ১.২ যদি কারো মোহরানা দশ লাখ বিশ হাজার টাকা হয় তাহলে
কাবিন খরচ কত হবে?
প্রথমে প্রথম চার লাখের জন্য হাজারে ১২.৫০ টাকা হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা এবং
বাকি ৬ লাখ এবং বিশ হাজার টাকার জন সাত শত টাকা মোট সাতান্ন শত টাকা লাগবে।
তবে কাজি সাহেব চাইলে কম নিতে পারে কিন্তু এর বেশি দাবি করতে পারে না।
যাতায়াতের জন্য দশ টাকা প্রতি কিলোমিটার দাবি করতে পারে। কাবিন রেজিস্ট্রেশন
হলে সাথে সাথে কোন টাকা ছাড়াই বরপক্ষ এবং কনেপক্ষকে কাবিননামার এক কপি
সার্টিফাইড কপি দিতে উনি বাধ্য এবং কাবিননামার জন্য যে টাকা উদাহরণ তা চারশত
টাকার বেশি হলে ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগিয়ে রশিদ দিতে আইনত বাধ্য
কাজি সাহেব সাথে সাথে উনি কাবিনের নকল দিবেন যদিও আমরা জানি না।

কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে বিবাহ

The Muslim marriages and Divorces (Registration) Act, ১৯৭৪ এর ৩ নং ধারায়
বলা হয়েছে, অন্য আইনে যাহাই থাকুক না কেন, মুসলিম আইনের অধীন সকল বিবাহ
নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে হবে।
সুতরাং কোর্ট ম্যারেজ বলে কোন কিছু আইনে নেই। যুবক-যুবতী বা নারী-পুরুষ,
স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা
সম্পাদন করে, সাধারণত তাই কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত। কিছু কিছু আইনজীবী
কোর্টের আশেপাশের কাজির মাধ্যমে বিবাহ করিয়ে দেন এবং আবার হলফনামা করান এবং
এই হলফনামা নোটারি করান যাতে কিছু আর্থিক লাভবান হতে পারেন। অনেক অঞ্চলে
নিকাহনাম এবং তালাকনামা নোটারি করানো হয় যাতে এর আইনগত প্রাধান্যতা পায়।
বাস্তবে বিবাহ কাজি অফিসে নিবন্ধন করাই যথেষ্ট। কোর্টে কোন নোটারি বা হলফনামা
করা লাগে না। সামান্য এই তথ্য আমাদের জানা থাকলে আমরা এইসব অপেশাদার
আইনজীবীদের প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।
এইরূপ কোন বিয়ে যদি নিকাহ রেজিস্টারের অফিসে রেজিস্ট্রি না করা হয়, তাহলে
সেই বিয়ের আইনগত কোন ভিত্তি থাকবে না। কোন এক সময় যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে
ত্যাগ করে, তাহলে অন্য পক্ষ আইনগত কোন প্রতিকার পেতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।
এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। দুইশত টাকার নন- জুডিশিয়াল
স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের
কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা যায় না। আইনানুযায়ী
কাবিননামা রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করাই বিয়ের জন্য যথেষ্ট। আবেগঘন সিদ্ধান্ত
নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী ভুল ধারণা করেন যে, শুধু এফিডেভিট করে বিয়ে করলে
বন্ধন শক্ত হয়। নিকাহ রেজিস্টারের অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে
হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে তারা। কিন্তু এটা সঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে, যদি কাবিন রেজিস্ট্রি করা না হয়, তাহলে স্ত্রী মোহরানা আদায়
করতে ব্যর্থ হতে পারে। অধিকন্তু আইন অনুযায়ী তার বিয়ে প্রমাণ করাই মুশকিল
হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ক্ষেত্রে সঙ্গী কর্তৃক প্রতারিত হবার সম্ভাবনা অধিক।
সুতরাং সকল ক্ষেত্রেই নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে।
বিদেশে কাবিননামা প্রেরণে তা নোটারি করা লাগে মাত্র। এর বাইরে বিয়ের কাজে
নোটারি পাবলিক বা আইনজীবির কোন কাজ নাই।

পালিয়ে বিবাহ করা এবং অপহরণের মামলা

অনেক অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে পরস্পরকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করতে চান, এমনকি
পালিয়ে যান বাড়ি থেকে মেয়ের বাবা ছেলে এবং তার পরিবারের লোকদের বিরুদ্ধে
অপহরনের মামলা দিয়ে ঝামেলা করেন।
এই সমস্যা সামাধানে প্রথমে ছেলেকে আইনগত বিবাহের বয়স একুশ এবং মেয়েকে আঠারো
হতে হবে। যদি তাদের এই বয়স হয় তাহলে তারা যাকে খুশি নিজ ধর্মের মধ্যে বিবাহ
করতে পারে। ছেলে এবং মেয়ে উভয় একজন নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে তাদের
বয়সের প্রমাণপত্র নিয়ে গিয়ে এই মর্মে হলফনামা করতে পারেন যে তারা সুস্থ
এবং সাবালক আইনগত যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তাদের আছে। তাই তারা দুইজন
পরস্পরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নিতে চায়। তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে
ধর্মীয় নিয়ম এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন এবং নিবন্ধন করবেন। এই
হলফনামা তারা কারো চাপে বা প্ররোচনায় করছেন না। এই হলফনামা নোটারি করে
নিজেদের কাছে রেখে এক কপি স্থানীয় থানায় দিতে পারেন তাহলে ছেলে পক্ষ
অপহরণের মামলা থেকে কিছুটা রেহাই পেতে পারেন যদিও পুলিশ অপহরণের মামলা আমলে
নিয়ে আসামী গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করে। তখন মেয়ে যদি স্বীকার করে তবে
মামলা শেষ আর অস্বীকার করলে মামলা চলে।
তবে মনে রাখবেন, যে মহিলার স্বামী আছে মানে বিবাহিত সে যদি তালাকপ্রাপ্তা না
হয় কিংবা স্বামী মৃত না হয় তবে হলফনামা করে লাভ হবে না। কারণ বিবাহিত মহিলা
তালাকপ্রাপ্ত হওয়া ছাড়া আবার বিবাহ করতে পারে না। কিন্তু অনেকেই বিবাহিত
মহিলার সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে তাকে পালিয়ে বিবাহ করেন যা অবৈধ।

মহিলার ইদ্দত পালন

স্বামী মারা গেলে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ হলে যে নির্দিষ্ট কয়েকদিন স্ত্রী
নিজেকে অন্য কোথাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকবে তাই ইদ্দত।

স্বামী মারা গেলে-

বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো, তার ইদ্দত তালাকপ্রাপ্ত মহাপবিত্র
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদের রেখে মারা
যাবে সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজেদের চার মাস দশ দিন বিরত রাখবে।

মিলনের পরে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে

পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘তালাকপ্রাপ্ত নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা
করবে’ ( আল-বাকারাহ ২২৮:২)
বিবাহ বিচ্ছেদ যে ভাবেই হোক তিন মাসিক (তিন মাস) পর্যন্ত তার ইদ্দত পালন করতে
হবে।

মিলনের আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ হলে

বিবাহিত স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলনের আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বিবাহের মোহরানা
অর্ধেক প্রদান করতে হয় আর ইদ্দত পালনের কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ইসলামে নাই।

ভরপোষণ

ইসলামি আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর। তবে এই দায়িত্ব
স্বামীর সামর্থ অনুযায়ী হবে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এটাই মৌলিক দায়িত্ব।
ছেলে ও মেয়ের ভরপোষণের দায়িত্বও বাবার উপর বর্তাবে। তবে ছেলে বালিগ হওয়া
এবং মেয়ে বিবাহ দেয়া পর্যন্ত মাত্র। তালাকের ইদ্দতের সময় কালেও স্ত্রী
ভরণপোষণের দাবিদার হবেন।

মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ (dissulation of marriage)

মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ চার প্রকারে হতে পারে।
১। স্বামী ধারা 
২। স্ত্রী ধারা 
৩। উভয়ের সম্মতিতে 
৪। আদালতের মাধ্যমে

স্বামী কতৃক তালাক

ইলা-আগের যুগে স্বামী কসম করে বলতো, আমি কোন দিন তোমার কাছে আর ফিরে আসবো না,
এবং সে নির্দিষ্ট সময়ে সেই মোতাবেক যদি ফিরে না আসে তখন তা তালাকে
রুপান্তরিত করা হত। আর ফিরে আসলে কসমের কাফকারা দিতে হতো। এটাকে তালাক হিসাবে
গ্রহণ করা হয়েছে।
জেহার মানে স্ত্রীকে মা বোনের সহবাসের জায়গার সাথে তুলনা করে সহবাস করালে
স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে তাই এটা তালাক হিসাবে গণ্য করা হয়। 

স্বামী কোন কারণ ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। প্রচলিত আইনে মুখে
উচ্চারনের সাথে স্ত্রীকে এবং স্ত্রী যেখানে বসবাস করে সেই ইউনিয়ন পরিষদে
তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে এবং সেই নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর
হবে। এই ৯০ দিনের মধ্যে স্ত্রীর যাবতীয় খরচ স্বামী বহন করবে। তালাক কার্যকর
হলে কাজি অফিসে নিবন্ধন করতে হবে, নিবন্ধন ফি পাঁচশত টাকা মাত্র।

স্ত্রী কর্তৃক তালাকে তৌফিজ

তালাকে তৌফিজ: ইসলামি শরীয়া আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রীকে সর্বাবস্থায় তালাক
দিতে পারেন। স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের
সময় বিয়ের কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক
প্রদানের লিখিত ক্ষমতা দেওয়া হয়। অবশ্য অনুমতি দেয়া না থাকলেও সুনির্দিষ্ট
কিছু কারণে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে
পারে।
আর কাবিননামায় ক্ষমতা দেয়া থাকলে তালাক দিতে পারবে।

আখিয়ারুল বুলুগ

নাবালক অবস্থায় [পনের বছরের আগে] অভিভাবক বিয়ে দিলে তাদের মধ্যে সহবাস না
হলে অথবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস হলে সে সাবালক হলে মানে তার বয়স ১৫
বছরের হলে সে এই বিবাহ আখিয়ারুল বুলুগ করতে পারে মানে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে
পারে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্মতিতে

মোবারতঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে যদি তারা বিবাহ বিচ্ছেদ
করতে চায় তারা করতে পারে এটাই মুবারত। 

স্ত্রী কতৃক স্বামীকে সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে

খুলাঃ স্ত্রী যদি স্বামীকে টাকা বা মোহরানা বা আর্থিক কোন লাভ
দিয়ে তালাকে রাজি করায় এবং স্বামী তালাক দিতে রাজি হয় তাহলে এই বিবাহ
বিচ্ছেদকে খুলা তালাক বলে।
লিয়নঃ স্ত্রীর প্রতি স্বামী ব্যভিচারের আরোপ নিয়ে আসে কিন্তু
চারজন সাক্ষী না নিয়ে আসে তখন কসম করে বলে আমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহর লানত
আমার প্রতি আর স্ত্রী অস্বীকার করে এবং কসম করে আল্লাহর লানত নেয় নিজের
প্রতি এটাই লিয়ন। এর মাধ্যমে তালাক হইয়ে যাবে। তালাক যে ভাবে হোক তা
নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
দৈহিক সম্পর্ক না হলে বাকি সব অবস্থায় স্ত্রীকে তিন মাস (ঋতু সাইকেল) ইদ্দত
পালন করতে হয়। তালাক যেভাবেই হোক উল্লিখিত ৯০ (নব্বই) দিন স্বামী কর্তৃক
স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ বহন করতে হবে। এই ৯০ দিনের মধ্যে স্ত্রীর
সন্তানসম্ভাবনা বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার
পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক স্বামী বা স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী
মোহরানা যেকোনও সময় দাবি করতে পারেন এবং স্বামী তা পরিশোধ করতে আইনত বাধ্য৷
স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ না দেন, তাহলে তার এক বছর বিনাশ্রম
কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ড হতে
পারে।
মনে রাখতে হবে যে, তালাক রেজিস্ট্রি করতে হয় তালাক কার্যকর হওয়ার পর আগে
নয়।। মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৯ এর ২৩ নম্বর বিধিতে বলা
হয়েছে, তালাক রেজিস্ট্রি করিবার পূর্বে নিকাহ রেজিস্টার এই মর্মে সন্তুষ্ট
হবেন যে, তালাক রেজিস্ট্রির জন্য আগত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ প্রকৃতপক্ষে তালাক
কার্যকরী করেছেন এবং এইরূপ সন্তুষ্টির জন্য উক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে
জিজ্ঞাসাবাদ করিবেন, তবে উক্তরূপ কোন ব্যক্তি পর্দানশিন মহিলা হলে, তার পক্ষে
দায়িত্বপ্রাপ্ত উকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে হবে। এই বিধিমালার ২৫ নং বিধি
অনুসারে, যে স্থানে তালাক সম্পন্ন হয়েছে, উক্ত স্থান যে নিকাহ রেজিস্টারের
(কাজীর ) এলাকাভুক্ত, সেই নিকাহ রেজিস্টার (কাজীর) দ্বারা তালাক রেজিস্ট্রি
করাতে হবে।

প্রচলিত আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ

বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী, পারিবারিক আদালত ১৯৮৫ অধীনে মামলা দায়ের
করতে পারে। 
বিবাহ বিচ্ছেদ ও ডিক্রি লাভের কারণসমুহঃ
মুসলিম আইন অনুসারে কোন বিবাহিতা স্ত্রীলোক নিম্নেলিখিত এক বা একাধিক কারণে
তাহার বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়ার অধিকারিণী হবে। যথাঃ-
(১) চার বৎসর কাল পর্যন্ত স্বামী নিখোঁজ।
(২) দুই বৎসর কাল পর্যন্ত স্বামী তাহাকে ভরণপোষণ প্রদানে অবহেলা করিয়াছে বা
ব্যর্থ হয়েছে।
(২) (ক) ১৯৬১ সনের মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিধান অমান্য করিয়া স্বামী
অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করেছে।
(৩) সাত বৎসর বা ততোধিক সময়ের জন্য স্বামী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে।
(৪) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামী তিন বৎসর কাল যাবৎ তাহার বৈবাহিক দায়িত্ব
পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
(৫) বিবাহের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন ছিল এবং তাহার ঐরূপ অবস্থা অব্যহত আছে।
(৬) দুই বৎসর পর্যন্ত স্বামী অপ্রকৃতিস্থ রহিয়াছে বা কুষ্ঠরোগ অথবা মারাত্মক
যৌন রোগে ভুগিতে থাকে।
(৭) বয়স ১৬ বৎসর পুর্ণ হবার আগে তাহাকে তাহার বাবা অথবা অন্য কোন অভিভাবক
বিবাহ দিয়েছে ও বয়স ১৮ বৎসর পুর্ণ হবার আগে সে (স্ত্রীলোক) উক্ত বিবাহ নাকচ
করেছে। শর্ত থাকে যে, বিবাহে যৌন মিলন ঘটে নাই।
(৮) স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করে; যেমন
ক) তাহাকে স্বভাবতঃই আক্রমণ করে বা নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে তাহার জীবন
দুর্বিষহ করিয়া তোলে-ঐরূপ আচরণ শারীরিক নির্যাতন নাও হয়, বা
খ) খারাপ চরিত্রের নারীগণের সংগে থাকে অথবা ঘৃণ্য জীবন-যাপন করে; বা
(গ) তাহাকে নৈতিকতাহীন জীবন-যাপনে বাধ্য করিতে চেষ্টা করে; বা
(ঘ) তাহার সম্পত্তি হস্তান্তর করে বা উক্ত সম্পত্তিতে তাহার আইনসঙ্গত অধিকার
প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে; বা
(ঙ) তাহাকে তাহার ধর্ম বিশ্বাস অথবা ধর্ম চর্চায় বাধা প্রদান করে; বা
(চ) যদি তাহার একাধিক স্ত্রী থাকে তবে কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী সে তাহার
সঙ্গে ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহার না করে;
(৯) মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের নিমিত্ত বৈধ বলিয়া স্বীকৃত অপর কোন
কারণে তবে শর্ত থাকে যে, ক) দণ্ডাদেশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ৩নং উপধারায়
বর্ণিত কারণে ডিক্রি দেওয়া হবে না।
খ) ১নং উপধারায় বর্ণিত কারণে দেওয়া ডিক্রি উহার তারিখ হইতে ৬ মাস কাল
পর্যন্ত কার্যকর হবে না; এবং স্বামী যদি উক্ত সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বা
কোন ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হইয়া আদালতকে সন্তোষজনক
উত্তর দেয় যে, সে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছে তবে আদালত উক্ত
ডিক্রি নাকচ করবেন; এবং
গ) ৫নং উপধারায় বর্ণিত কারণে ডিক্রি দেওয়ার পূর্বে আদালত স্বামীর
আবেদনক্রমে তাহাকে আদেশ প্রদান করিতে পারেন যে, অত্র আদেশের তারিখ হইতে ১
বৎসর কালের মধ্যে সে আদালতের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রমাণ করিতে হইবে যে, সে
পুরুষত্বহীনতা হইতে আরোগ্যলাভ করিয়াছে; এবং যদি স্বামী উক্ত সময়ের মধ্যে
ঐরূপে আদালতকে সন্তুষ্ট করিতে পারে তবে উক্ত কারণে কোন ডিক্রি দেওয়া হবে
না। 

তালাকের নোটিশ দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা?

তালাক বা তালাকে তৌফিজ যেটাই দেয়া হোক সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান বরাবর এবং স্বামী বা স্ত্রীকেও নোটিশ দেয়া বাধ্যতামূলক। নোটিশ
প্রাপ্তির ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ দেয়া না হলে তালাক কার্যকর
হবেনা এটা আইনে না থাকলেও উচ্চ আদালতের রায় আছে যে নোটিশ দেয়া না হলে
তালাক কার্যকর হবে না। ১৯৬১ সালের আইনে তালাকের নোটিশ প্রদান না করা হলে এক
বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান দেয়া আছে।

তালাকের রেজিস্ট্রি খরচ

  • তালাক রেজিস্ট্রি ফি:২০০০ টাকা (পূর্বে ৫০০ টাকা ছিল)
  • নকল প্রাপ্তি ফি: ৫০ টাকা।
  • যিনি তালাক নিবন্ধন করবেন উনি টাকা পরিশোধ করবেন।
  • তালাক যেখানে সংঘটিত হবে সেই এলাকার কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে
  • প্রদত্ত খরচ একটি রশিদ প্রদান করবেন কাজি সাহেব।

তালাকের নোটিশ নমুনা ফর্ম

তালাকের নোটিশ নমুনা ফর্ম
তালাকের নোটিশ নমুনা ফর্ম

ভরপোষণ

ইসলামি আইনে স্ত্রীর ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর। তবে এই দায়িত্ব
স্বামীর সামর্থ অনুযায়ী হবে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এটাই মৌলিক দায়িত্ব। ছেলে
ও মেয়ের ভরপোষণের দায়িত্বও বাবার উপর বর্তাবে। তবে ছেলে বালিগ হওয়া এবং মেয়ে
বিবাহ দেয়া পর্যন্ত মাত্র। তালাকের ইদ্দতের সময় কালেও স্ত্রী ভরণপোষণের দাবিদার
হবেন।

অভিভাবকত্ব

মুসলিম আইনে পিতাই সন্তানের অভিভাবক। পিতার অবর্তমানে দাদা অথবা পিতা বা দাদা
অছিয়তকৃত ব্যক্তি। তবে এখানে সন্তানের হেফাজতের অভিভাবকত্ব বলতে ছেলে সন্তানের
বয়স এবং মেয়ে সন্তানের বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত মায়ের জিম্মায় থাকাকে বোঝায়।
তবে সন্তানের ভালোর দিক বিবেচনা করে আদালত যে কাওকে জিম্মা দিতে পারে। 

মুসলিম আইনে দান বা হেবা

প্রতিদান ছাড়া খুশি হয়ে নিজের যেকোন সম্পত্তি কাওকে উপহার দেয়াকেই হেবা বলে।
ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পত্তি হেবা করে দিতে পারে। হেবা করার জন্য অফার করতে হবে
এবং গ্রহিতা তা গ্রহণ করতে হবে এবং সম্পত্তির দখল বোঝায়ে দিতে হবে। দখল
হস্তান্তরিত না হলে হেবা বৈধ হবে না।

ওয়াকফ করা

ধর্মীয় উদ্দেশে নিজের সম্পত্তির মালিকানা আল্লাহ বরাবর হস্তান্তরিত করা এবং সেই
সম্পত্তির আয় ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যয় করাই ওয়াকফ
উত্তরাধিকারঃ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার সম্পত্তি ইসলামি আইন অনুযায়ী বণ্টিত
হবে। তবে ব্যক্তি চাইলে জীবিত থাকতে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ কাওকে অছিয়ত করে
যেতে পারে ; যারা স্বাভাবিক ভাবে সে মারা গেলে সম্পত্তি পেতো না।

মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণ

মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণের কোন অনুমতি নেই। চাইলে লালন-পালন করা যেতে পারে।
সন্তানকে তার প্রকৃত পিতার নামেই বড় করতে হবে।

বিবাহের একটি কাবিননামা বিশ্লেষণ

একটি কাবিননামায় ২৫ টি পূরণীয় ঘর থাকে যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলঃ
১। ৩ ও ৬ নাম্বার ঘর যাতে উভয়ের বয়স উল্লেখ থাকে। আইনগত ছেলের বয়স ২১ এবং
মেয়ের বয়স ১৮ হতে হবে।
২। ৭, ৮, ৯, ১০, ধারা যাতে উকিল নিযুক্ত হলে তাদের নাম থাকে। মেয়ে ও ছেলে উভয়ে
কাজির সামনে তাহলে উকিল লাগে না। যদি কোন কারণে তারা সরাসরি উপস্থিত না থাকে তখন
উকিল তাদের পক্ষে এই নিকাহনামা সম্পাদন করবেন।
৩। ১১ ধারা এতে ২ জন্য সাক্ষীর নাম থাকে।
৪। ১৩ ধারায় দেন মোহরের পরিমাণ উল্লেখ থাকে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই
কাবিননামায় সাইন করার আগে এইটি ভালো করে দেখে নেয়া উচিত।
৫। ১৪ ধারা এটি গুরুত্বপূর্ণ এখানে দুটি আরবি শব্দ আছে মুয়াজ্জাল এবং মুঅজ্জাল,
প্রথমটির মানে হচ্ছে দেন মোহর যে অংশ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য আর অন্যটির মানে
হচ্ছে দেন মোহরের যে অংশ বিলম্বে পরিশোধ যোগ্য। মানে স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের
পর বা দাবি করলে স্বামী সময় নিতে পারবে।
৬। ১৫ নাম্বারে দেনমোহর যদি নগদে বা কিছু পরিশোধ করা হয় তা লেখা থাকে।
৭। ১৬ ধারায় যদি মোহরানার জন্য কোন জমি দেয়া হয় তার বিবরণ।
৮। ১৭ ধারায় বিশেষ যেকোন শর্ত দেয়া যায়।
৯। ১৮ ধারায় স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিচ্ছে কিনা। যাকে তালাকে তৌফিজ
বলে। এই অধিকার নিয়ে রাখা ভালো মেয়ে হিসাবে দেয়া থাকলে স্ত্রী কোন কারণ
ছাড়াই তালাক দিতে পারে।
১০। ১৯ ধারায় স্বামীর তালাক দেয়ার অধিকার খর্ব করা হলে লেখা থাকে।
১০। ২০ ধারায় বসবাস বা খাওয়া-দাওয়ার দলিল করা হলে তা লেখা থাকে।
১১। ২১ ও ২২ ধারায় একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশী পরিষদের অনুমতি বিষয়ে লেখা
থাকে।
এবং বর কনে সাক্ষী কাজির স্বাক্ষর থাকে। এগুলোই কাবিননামার উল্লেখযোগ্য বিষয়।

কাজী অফিসে বিয়ে করতে কত টাকা লাগে

বিবাহের মোহরানার ওপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়ে তবে সর্বনিম্ন ২০০
টাকার কম হবে না।
  • দেনমোহর ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে লাখে ১.৪% বা প্রতি হাজারে ১৪ টাকা।
  • দেনমোহর ৫ লাখের বেশি হলে প্রথম ৫ লাখে ১.৪% এবং পরের প্রতি লাখ বা এর
    অংশের জন্য ১০০ টাকা।
  • যাতায়ত বাবদ প্রতি কিমি ১০/-
  • সূচি তল্লাশি বাবদ ১০ টাকা 
  • নকল ৫০ টাকা 
  • তালাক নিবন্ধন ফি ১০০০ টাকা।
উদাহরণঃ কাবিনামায় যদি মোহরানা ৬ লাখ এক টাকা হয় তাহলে প্রথম
পাঁচ লাখের জন্য প্রতি হাজারে ১৪ করে ৭হাজার এবং পরের এক লাখ ১ টাকার জন্য
দুইশত টাকা মোট সাত হাজার দুইশত টাকা টাকা দিতে হবে। কাজি চাইলে এর কমও নিতে
পারে।

নিবন্ধন ফি এর রশিদ প্রদান

বিয়ের সময় যে টাকা উনি উদাহরণ রেজিস্ট্রেশন বাবদ তার একটি রশিদ উনি বরকে দিতে
বাধ্য। সাথে রশিদে ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগাবেন এবং ফ্রিতে বর ও কনে
উভয়কে এক কপি বিয়ের নিকাহনামার সার্টিফাইড কপি দেবেন সেই অনুষ্ঠানেই; একান্তই
না পারলে দুই-একদিনের মধ্যে এই কপি বুঝিয়ে দিবেন। বিবাহ নিবন্ধনের যাবতীয় ফি
বর কতৃক প্রদেয় আর তালাক নিবন্ধন ফি যে পক্ষ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন সেই
পক্ষ কর্তৃক প্রদেয়।

কাবিননামার কপি কোথায় পাবেন

সাধারণত যেই কাজি বিবাহ পড়ান এবং নিবন্ধন করেন তার কাছেই থাকে এইসব বালাম বা
নিকাহ নিবন্ধনের বই। যে কেউ আবেদন করে এই কাবিনামা পেতে পারে তাতে আইনগত কোন
বাধা নাই। কাবিনামার জন্য সেই কাজিকে বললেই উনি এর নকল দিয়ে দেবেন। নকলের
জন্য উনি ৫০ টাকা নিতে পারেন আর তল্লাশি এক বছরের জন্য হলে ১০ টাকা।
আর যদি সেই কাজি মারা যায় বা তার বয়স ৬৫ হলে তাকে কাজি হিসাবে অব্যাহতি
দেয়া হয় তাহলে জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সেই কাজি কর্তৃক
যত বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে তা সেখানে পাওয়া যাবে। মোহরানা 

পরিবর্তন করা যায় কি?

সুন্নি ফিকাহ মোতাবেক বৃদ্ধি করা যায় তবে কমানো যাবে না। আর স্বামী স্ত্রী
মৌখিকভাবে কমিয়ে নিলে হবে না যেহেতু কাবিনামায় লেখা হয়ে গেছে। এই কাবিনামা
সংশোধন করা যাবে কিনা তা আইন বা বিধিমালায় লেখা নাই তাই কেউ চাইলে আদালতের
আশ্রয় নিতে পারে তা ছাড়া কোন উপায় নাই।

মোহরানা পরিশোধের দলিল করা যাবে কি?

আইন বা বিধিমালায় এই বিষয় কিছুই বলা নাই যে যদি কেউ তার স্ত্রীকে মোহরানা
দিয়ে দেয় তার প্রমাণ হিসাব কি করবে, কারণ অনেক মেয়েই মোহরানা নিয়ে পরে
তালাক হলে আবার দাবি করে। তবে আপনি চাইলে মোহরানার বিনিময়ে জমি ক্রয় করে
দিতে পারেন অথবা চাইলে প্রাপ্তিস্বীকার লেখে তা রেজিস্ট্রেশন করে রাখতে
পারেন। 

তালাকের নোটিশ কি কাজি অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠাতে হবে?

তালাকের নোটিশ কাজি বা আইনজীবীর মাধ্যেম পাঠানোর কোন বাধ্যবাধকতা নাই, যিনি
তালাক দিবেন উনি যেইকোন কাগজে তালাকের বিষয়ে উল্লেখ করে স্ত্রী বরাবর এবং
স্ত্রী যেখানে বসবাস করেন সেই ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন
পাঠালেই হবে রেজিস্ট্রার্ড ডাক যোগে

নোটিশ পাঠালেই তালাক কার্যকর নয়

তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির নব্বই দিন পরে তালাক কার্যকর হয়, স্ত্রী গর্ভবতী
থাকলে সন্তান প্রসবের পর কার্যকর হবে, নোটিশ কালীন তিন মাসের স্ত্রীর যাবতীয়
খরচ স্বামীকে বহন করতে হবে।

সমোজতা হয়ে গেলে তালাকের নোটিশ বাতিল করতে হবে কি?

যদি স্বামী স্ত্রীর মাঝে সমঝোতা হয়ে যায় তাহলে এই নোটিশ বাতিলের জন্য আইনে
কিছুই বলা নাই। তাই নোটিশ বাতিলের প্রয়োজন নাই৷

বিবাহ ও তালাক বিষয়ক অপরাধ

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত বিয়ে সংক্রান্ত অপরাধসমূহের
সংজ্ঞা ও দণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সাথে সাথে ১৯৬১ সালের
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশে বহু বিবাহ এবং তালাক বিষয় আপরাধ আলোচনা করা আছে।
দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৪ ধারা অনুসারে

ধারা ৪৯৪ দণ্ডবিধি

স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য
অপরাধ। উক্ত ধারা মোতাবেক, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় পুনরায়
বিয়ে করলে, তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এবং এই অপরাধ প্রমাণিত হলে,
প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও
দণ্ডিত হতে হবে।

ব্যতিক্রমও হচ্ছে।

যদি স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন এবং জীবিত আছে মর্মে কোন
তথ্য না পাওয়া যায় এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে
গণ্য হবে না।

এছাড়া, কোন স্বামী বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের অনুমতি নিয়ে বিশেষ কোন
কারণ দেখিয়ে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে সালিশি পরিষদের নিকট আবেদন করলে, সালিশই
পরিষদ তা যাচাই সাপেক্ষে পরবর্তী বিয়ের অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষেত্রে
পুনরায় বিয়ে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।

ধারা ৪৯৫ দণ্ডবিধি (বিয়ের কথা গোপন করলে)

আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে যদি পুনরায় বিয়ে করে, তবে
যাকে প্রতারণা করে বিয়ে করা হলো, তিনি অভিযোগ করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড
এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ধারা ৪৯৭ দণ্ডবিধি (ব্যভিচার করলে)

অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে উক্ত বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সম্পূর্ণ
বাতিল হবে। এক্ষেত্রে, তা দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড
হতে পারে।

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ধারা ৬

সালিসি কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া পুরুষ বিবাহ করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং দশ
হাজার টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ধারা ৭

তালাকের নোটিশ না দিয়ে তালাক দিলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং সাথে দশ হাজার টাকা
অর্থদণ্ড হতে পারে। 

পারিবারিক বিষয়গুলো কোন আদালতে বিচার হবে?

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ সালে জারি করা হয়। এই পারিবারিক আদালত
অধ্যাদেশের অধীনে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ
বিচ্ছেদ আইন, ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ৪৮৮ ধারার বিধান, ১৮৯০
সালের অভিভাবকত্ব আইন অন্তর্ভুক্ত করা। পারিবারিক আদালতের জজগণ ৫টি বিষয়ের
উপর বিচার কার্য পরিচালনা করেন সেগুলো হলে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার
পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ বা খোরপোশ, শিশু সন্তানদের অভিভাকত্ব ও
তত্বাবধান ইতিপুর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর,
বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার ছিল দেওয়ানি আদালতের। স্ত্রী ও সন্তানদের
ভরনপোষন বা খোরপোষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা বা এখতিয়ায় প্রথম
শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ছিল। শিশু সন্তানদের অভিভাকত্ব ও তত্ত্বাবধান বিষয়ে
সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার ছিল জেলা জজের এবং নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয়
বন্ধক বা যেকোন প্রকারের হস্তান্তর করার জন্য নাবালকের নিযুক্তীয় অভিভাবককে
জেলা জজের পারমিশন নিতে হত। বর্তমানে জেলা জজদের পরিবর্তে পারিবারিক আদালতের
জজগণ এই অনুমতি দিয়ে থাকেন। বর্তমানে উত্তরাধিকার বিষয়ে সাকসেশন
সার্টিফিকেট পেতে হলে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আবেদন করতে হয়।

কাজি বা মুসলিম বিবাহ রেজিস্টার হতে চাইলে

কাজি বা নিকাহ রেজিস্টার হতে চাইলে নিজ জেলায় জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন
করতে হবে। যদি কাজির পদ খালি থাকে তবেই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে লাইসেন্স
দেয়া হয়। ২০০৯ সালের বিধি মোতাবেক নিয়মাবলি জেনে নেই।
আবেদনের নিয়মাবলিঃ (মহিলা কাজি হিসাবে নিযুক্ত হতে পারেন না )
  • নির্দিষ্ট আবেদনপত্রে আবেদন করতে হবে;
  • বয়স ২১-৪৫ বছর এর মধ্যে হতে হবে
  • মাদ্রাসা বোর্ড হতে আলিম পাস হতে হবে
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
নিকাহ রেজিস্টার হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হলে
নিম্নলিখিত হারে টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা করতে হবে ।
  • সিটি করর্পোরেশনে হলে ২০,০০০ টাকা
  • জেলা শরের পৌরসভা হলে ৪০০০ টাকা
  • উপজেলায় হলে ১৪০০ টাকা
  • ইউনিয়নে হলে ১০০০ টাকা
এছাড়া একজন নিকাহ রেজিস্টার কে আরো দুই প্রকারের ফি জমা করতে হয়
  • বাৎসরিক ফি
  • বিবাহ নিবন্ধন ফি

বাৎসরিক ফি

প্রতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে
  • সিটি করর্পোরেশনে ১০,০০০ টাকা
  • জেলায় ২০০০ টাকা
  • উপজেলায় ১০০০ টাকা
  • ইউনিয়নে ২০০ টাকা

সরকার কত টাকা পায় বিবাহ রেজিস্ট্রি থেকে

নিকাহ রেজিস্টার বিবাহ নিবন্ধন ফি বাবদ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে
  • সিটি কর্পোরশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের বিপরীতে ১৬,০০০/ 
  • পৌরসভার জন্য ৪০০০ টাকা
  • ইউনিউনের জন্য ২০০০ টাকা
নিকাহ রেজিস্টার কোন সরকারি চাকরিজীবি বা বেতনভোগী নন।
নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যেমে যে টাকা পান উনি তা নিজ পকেটে রাখনে। তবে
উনার বালাম বই কেনা অফিস তিনি সবই নিজ টাকায় করেন।

হিন্দু বিবাহ রেজিস্টার হতে চাইলে

২০১২ সালের হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ও ২০১৩ সালের হিন্দু বিবাহ
নিবন্ধন বিধিমালা অনুসারের হিন্দুদের বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।
দালিলিক প্রমানের জন্য চাইলে বিবাহ নিবন্ধন করতে পারেন একজন হিন্দু ।
বিবাহ রেজিস্টার হতে চাইলে নিজ জেলা থেকে রেজিস্টার বরাবর আবেদন করতে
হবে। আসুন দেখি হিন্দু বিবাহ রেজিস্টার হতে কি কি লাগে আর কি কি লাগে
পদ খালি থাকলে জেলা রেজিস্টার বরাবর আবেদন করতে হবে।
  • নির্দিষ্ট আবেদনপত্রের মাধ্যমে আবেদন
  • উচ্চ মাধ্যমিক পাস অথবা এস.এস.সি পাস এবং কাব্যতীর্থ, ব্যাকরণতীর্থ
    পাস (বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের ৩ বছরের কোর্স পাস
    হলে প্রাধান্য দেয়া হবে )
  • ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • শিক্ষাগতা যোগ্যতার সনদ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সনাতন ধর্মাবলম্বী হতে হবে
  • বয়স ২৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে হতে হবে
আবেদন গৃহীত হলে এবং লাইসেন্স প্রাপ্ত হলে নিজ উপজেলায় বিবাহ
রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। সাধারণ উপজেলায় একজন এবং সিটি করর্পোরশনে ৩
জন হিন্দু বিবাহ রেজিস্টার নিয়োগ দেয়া হয়।

বাৎসরিক ফি জমা দেয়া

প্রতি বছর ৩১ মার্চের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বাৎসরিক ফি জমা
দিতে হবে

  • সিটিতে হলে ২০০০ টাকা 
  • উপজেলায় ১০০০ টাকা

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধের প্রক্রিয়া

ধর্মীয়ভাবে বিবাহ সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট আবেদনপত্রে বর ও কনের ছবি যুক্ত করে
এবং স্বাক্ষর করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। বিবাহ নিবন্ধনের জন্য যা যা
লাগবে-
  • বর ও কনে
  • বরের অভিভাবক 
  • কনের অভিভাবক
  • বর পক্ষের একজন সাক্ষী 
  • কনে পক্ষের একজন সাক্ষী
  • ব্রাহ্মন যিনি বইয়ে পড়িয়েছেন
  • নিকাহ রেজিস্টার

হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন খরচ

একটি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০০০/-টাকা।
নকল প্রাপ্তি ফি ১০০/-রশিদ প্রদান: ২০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প যুক্ত রশিদ
‘দিবেন।

হিন্দু আইনে তালাক

হিন্দু আইনে তালাকের কোন বিধান নাই। তবে স্ত্রী চাইলে স্বামী থেকে আলাদা
থাকতে পারে এবং স্বামী তার ভরপোষণ দিতে বাধ্য ।

খ্রিস্টান বিবাহ

খ্রিস্টান বিবাহ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি মোতাবেক পাদ্রির উপস্থিতে গ্রির্জায়
অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য খ্রিস্টান বিবাহ আইন ১৮৭২, বিবাহ
বিচ্ছেদ আইন ১৮৬৯ এবং উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫ এই তিন আইনে বাংলাদেশে এদের বিবাহ
তালাক এবং উত্তরাধিকার পরিচালিত হয়।

বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ (ভিন্ন ধর্মের বিবাহ আইন)

রাজা রামমোহন রায় এবং ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে না জেনে অনেকেই এই বিশেষ বিবাহ
আইনকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করেন এবং নিজ ধর্ম বজায় রেখে বিবাহ করা যাবে বলে
মতামত দিয়ে থাকেন। প্রথমেই আইন প্রণয়নের পিছনের ইতিহাস জেনে নেই, তাহলে
আমাদের স্বচ্ছ ধারণা হবে এই আইন বিষয়ে৷
রাজা রামমোহন রায়ের ধর্মীয় সত্য অনুসন্ধানের একান্ত ইচ্ছায় হিন্দুধর্মের
বেদের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের কোরআন, খ্রিস্টান ধর্মের বাইবেল এবং ইহুদি
ধর্মের ধর্ম গ্রন্থ পড়তে শুরু করেন। সকল ধর্মের গ্রন্থ পড়ে এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হন যে সকল ধর্মের উদ্দেশ্য একই এবং অভিন্ন। আর তার পক্ষে হিন্দু ধর্ম
ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণের কোন যুক্তি নাই। তাই তিনি ১৮২৮ সালে সকল ধর্মের
ভালো দিকগুলো নিয়ে একটি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার জন্য ব্রাহ্মসভা
প্রতিষ্ঠিত করেন যা পরে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৮৩৩ সালে রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যু হলে তার এই সভা নানা প্রতিকূলতার সামনে
পড়ে। তখন রবি ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই
ব্রাহ্মসভাকে এগিয়ে নিয়ে আসতে যুক্ত হন এবং ব্রাহ্মসমাজ ছড়িয়ে পড়তে শুরু
করে।
বলা যায় রাজারামমোহনের মৃতপ্রায় ব্রাহ্মসমাজকে রবি ঠাকুরের পিতা
দেবেন্দ্রনাথ নতুন জীবন দান করেন ১৯৫৭ সালের দিকে কেশবচন্দ্র সেন এই
ব্রাহ্মসমাজে যোগ দান করেন এবং দেবেন্দ্রনাথের ডান হাতে পরিণত হন। অল্পদিনের
মধ্যেই তাদের মধ্যেও বর্ণপ্রথা এবং সামাজিক নানা প্রথা সংস্কার নিয়ে মত
পার্থক্য দেখা দেয় এবং তারা পৃথক হয়ে যান এবং ১৯৬৮ সালে কেশবচন্দ্র ভারতের
ব্রাহ্মসমাজ নামে নতুন সংগঠন তৈরি করেন আর দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্মসমাজ ‘আদি
ব্রাহ্মসমাজ নামে, থেকে যায়।
কেশবচন্দ্র এই ব্রাহ্মসমাজের বাণী সমস্ত ভারতব্যাপী ছড়িয়ে দিতে থাকেন। এই
সমাজে যারা বিশ্বাস করেন তাদের নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় রীতি ছাড়া বিবাহের
জন্য একটি রাষ্ট্রীয় আইন প্রস্তুতের জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকেন। অবশেষে
১৮৭২ সালে বৃটিশ সরকার এই বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ তৈরি করে। এই আইনে প্রথম এক
বিবাহ এবং বিবাহের ছেলের বয়স আঠারো এবং মেয়ের চৌদ্দ নির্ধারন করা হয়।
বৃটিশ শাসকরা তার ইচ্ছার প্রতিফলিত করেন এই আইনে। আঠারো শতকে এই উপমহাদেশে
হিন্দু-মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় বিরোধ চরম তুঙ্গে ছিল-তাই এই আইন বিশেষ
সর্তকতারে সাথে তৈরি করা হয়। রাজা রামমোহনের ব্রাহ্মসমাজের অনুসারীদের
রাষ্ট্রীয় ভাবে বিবাহের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের অনেকেই এই আইনের ব্যাখ্যায় শুধু বিবাহের কাজে উনি এই আইনে বিবাহ
করছেন এমন শপথ করে এই বিবাহ করা যায় বলে থাকেন। উপরের আলোচনা পড়ে এবং আইনটি
পড়লে আমরা বুঝতে পারবো যে এই আইনে এমন কোন সুযোগ নাই। ধর্মহীন বা
ব্রাহ্মসমাজে বিশ্বাসী বা নাস্তিকই এই আইন বিবাহ করতে পারে মাত্র। আর
সংবিধানের ১৪৯ অনুচ্ছেদের কারণে এই আইনটি এখনো বাংলাদেশে কার্যকর।

বাংলাদেশে বর্তমানে ব্রাহ্মসমাজের অবস্থা

বাংলাদেশ ব্রাহ্মসমাজের মন্দিরটি পাটুয়াটুলীতে। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ঠিক
পাশেই অবস্থিত। রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ নিরাকার ঈশ্বরের আরাধনা
করেন। এই সমাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের
মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ ও কুসংস্কার দূর করা। পাটুয়াটুলীতে ব্রাহ্মসমাজের
মন্দিরে প্রতি রোববার প্রার্থনা হয়। ব্রাহ্মদের মধ্যে দুটি ভাগ আছে৷ এ দুটি
হলো জন্মসূত্রে ব্রাহ্ম ও অ- আনুষ্ঠানিক ব্রাহ্ম। হিন্দুদের মধ্যে যাঁরা
ব্রাহ্মধর্ম সমর্থন করেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি, তাঁরাই
অ-আনুষ্ঠানিক ব্রাহ্ম। তাঁরা সমাজের সদস্যও হতে পারেন। এ ছাড়া দীক্ষালাভের
মাধ্যমেও ব্রাহ্মসমাজের সদস্য হওয়া যায়। বর্তমানে সারা দেশে মোট ব্রাহ্মের
সংখ্যা ৬২। তবে জন্মসূত্রে ব্রাহ্ম আছেন মাত্র ১৩ থেকে ১৫ জন। ব্রাহ্মসমাজের
কার্যনির্বাহী কমিটি সাত সদস্যের। এ ছাড়া সাত সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডও আছে।
তাঁরা মন্দিরসহ সব সম্পদের দেখভালের দায়িত্বে আছেন। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে
ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজের এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ কিছু দিনে মন্দিরে উৎসব
হয়। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকি হিসেবে বাংলা সনের ১১ মাঘ বিশেষ কর্মসূচি
থাকে। তখন এখানে বেদের সঙ্গে সঙ্গে কোরআন, ত্রিপিটক, বাইবেলও পাঠ করা হয়। এ
ছাড়া পয়লা বৈশাখ রাজা রামমোহন রায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকিও পালন করেন
ব্রাহ্মরা।

বিশেষ বিবাহ আইন

স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক হিসাবে
দায়িত্বপালন করেন। ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পরে ১৯৯৮ পর্যন্ত কোন বিবাহ
নিবন্ধকই ছিলো না। ১৯৯৮ সালে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি প্রাণেশ সমাদ্দার
নিয়োগ দেয়। দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালনের পর উনিও মারা যান। এখন তার দায়িত্ব
অন্যরা পালন করছেন।

কারা এই আইনে বিবাহ করতে পারে

যেসব ব্যক্তি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন
ধর্ম গ্রহণ করেননি বা বিশ্বাস করে না এককথায় নাস্তিকরা এই আইনে বিবাহ করতে
পারে। যেসব ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছেন তারা
নিজেদের মধ্যে এই আইনে বিবাহ করতে পারেন নিজ ধর্ম বজায় রেখে।

তাই বলা যায় মুসলিম ব্যক্তি এই আইনে বিবাহ করতে পারে না ধর্ম ত্যাগ ছাড়া।
বর্তমানে বিদেশী নাগরিক এবং বাংলাদেশীদের মধ্যে বিবাহ এই আইন করা হয় অনেক
ক্ষেত্রে। তবে বিদেশী নাগরিক মুসলিম হলে এই আইনের প্রয়োজন হয় না, সাধারণ
আইনে বিবাহ করতে পারে।

বিবাহের শর্ত

  • চুক্তি সম্পাদনের যোগ্য হওয়া
  • ছেলের বয়স ২১ বছর এবং মেয়ের ১৮ বছর হতে হবে এখনকার অন্য আইনের কারণে।
    (যদি আইনে ১৮ এবং ১৪ দেয়া আছে)
  • উভয়ের বিবাহবন্ধনযুক্ত জীবিত কোন স্বামী/স্ত্রী না থাকা
  • রক্তসম্পর্কীয় নিষিদ্ধ সম্পর্ক না থাকে
  • বিবাহের ১৪ দিন আগে বিবাহ রেজিস্টার বরাবর আবেদন এবং নোটিশ করা হয় বিয়ে
    করার জন্য। 
  • আবেদন পেলে বিবাহের নোটিশ রেজিস্টার তার কার্যালয়ে ঝুলিয়ে রাখেন ১৪ দিন

বিবাহের নিয়ম

আবেদনের চৌদ্দ দিন পর বর ও কনে এবং তিনজন সাক্ষী সহ উপস্থিত হবেন। বিবাহ
রেজিস্টার কিছু বাক্য পড়াবেন এবং বিবাহ পড়িয়ে তা রেজিস্ট্রেশন করবেন। এবং
বিবাহের সার্টিফিকেট প্রদান করবেন।

ধর্ম ত্যাগের হলফনামা

প্রকৃতপক্ষে আলাদা হলফনামা করে তা নোটারি করে ধর্ম ত্যাগের আইনগত ভিত্তি নাই।
কারণ বিয়ের আবেদন ফর্মেই লেখা থাকে উনি এই আইনে বর্ণিত ধর্মে বিশ্বাস করেন
না। তবে বিভিন্ন কারণে ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফ করে ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা
দেয়া হয় এবং তা নোটারি করা হয় যাতে কোন সমস্যা না হয়। অনেকেই আবার আদালতে
বিবাহের ঘোষণা দিয়ে বিয়ে করেন এবং সেই ঘোষণা নিয়ে বিশেষ বিবাহ
রেজিস্ট্রেশনের জন্য আসেন। প্রকৃত কথা হলো, এই আইন এবং বিবাহ স্পেশাল বিবাহ
নিবন্ধকই পড়ান আইনগত বাকি সব কিছু পূর্ণ হলে এবং উনি নিবন্ধন করে এবং
বিবাহের সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফিঃ সরকার সময় নির্ধারণ করে দেন এখনকার
হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। 

বিবাহ বিচ্ছেদ

এই আইনে বিবাহ হলে ১৮৬৯ সালের খ্রিষ্টান বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে প্রদত্ত অভিযোগের
ভিত্তিতেই স্বামী বা স্ত্রী আদালতে তালাকের আবেদন করতে পারবেন। আদালতের বাইরে
তালাক প্রদানের কোন সুযোগ নাই এই আইনের অধীনে। মামলা জেলা জজ বরাবর করতে হয়
উত্তরাধিকারঃ এই আইনে বিয়ে হলে সন্তানের উত্তরাধিকার ১৯২৫ সালের
সাকসেশন আইনে পরিচালিত হবে। 
ভুল ধারণা
মুসলিম ব্যক্তি নিজ ধর্ম বজায় রেখে এই আইনে বিবাহ করতে পারবে বলে অনেকেই
মতামত দেন। তবে আইনটি ভালো করে পড়লে এই ধারণা পাল্টে যাবে। মুসলিম এই আইনে
বিবাহ করতে পারে না ধর্ম ত্যাগ
ছাড়া।
এছাড়া সাঁওতালরা অনেকেই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী তাই গীর্জায় গিয়ে পাদ্রির
কাছ বিয়ে করেন এ ছাড়া কিছু সাওতাল হিন্দু নিয়মে বিয়ে করেন।
মনিপুরীরা হিন্দুধর্মের অনুসারী তাই হিন্দু রীতিতে এবং পাহাড়ি গারো ১৮৬২ সাল
থেকে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর থেকে সবাই খ্রিষ্টান নিয়মে বিবাহ করেন।

বিশেষ বিবাহের কাবিন নামা

বিদেশ থেকে তালাক কিভাবে

প্রথমে বলা রাখা ভালো তালাক একটি ধর্মীয় কাজ এবং এই ধর্মীয় কাজের যাবতীয় নিয়ম
কানুন ধর্মীয় রীতিনীতি হিসাবে সম্পন্ন হবার কথা ১৯৩৭ সালে শরিয়া আইন অনুযায়ী।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আইনের প্রয়োগ করতে ধর্মের বাইরেও কিছু নিয়ম কানুন
মানতে হয় এই কাজগুলোকে আইনগত বৈধতা দিতে। দেশের বাইরে থেকে কোন কাজ করার ক্ষমতা
কাউকে দিতে হয় মোক্তারনামার মাধ্যমে যার নিয়ম নিম্নরূপঃ
  • বিদেশে বসে তালাকের নোটিশটি প্রস্তত করুন
  • একটি মোক্তারনামা প্রস্তুত করন
  • আমমোক্তার নামাটি বাংলাদেশ দূতাবাসের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সম্মুখে
    স্বাক্ষর করন
  • তালাকের নোটিশে স্বাক্ষর করণ।
  • দূতাবাস কতৃক মোক্তারনামাটি প্রত্যায়ন করন
  • এই কাগজ গুলো দেশে পাঠিয়ে নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা
    সত্যায়িত করুন ২ মাসের মধ্যে।
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরে জেলা প্রশাসকেরর কার্যালয় মোক্তারনামাটি
    স্ট্যাম্পযুক্ত করন ৩ মাসের মধ্যে।
  • স্ত্রী যে স্থানে বসবাসের করে সেই চেয়ারম্যানকে নোটিশ প্রদান এবং স্ত্রীকেও
    এক কপি তালাকের নোটিশ প্রদান
  • ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর
  • এর পর তালাক নিবন্ধন
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এবং মুসলিম বিবাহ এবং তালাক নিবন্ধন আইন ১৯৭৪
বিধিমালা ২০০৯ এবং তালাক নিবন্ধনের বালাম বই বিশ্লেষণ করে দেখা যায় নোটিশ
প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সমঝোতার জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ করার বিধান
আছে, তাই বিদেশে বসে এটা সম্ভব না।
আরো বাস্তবতা
  • মোক্তারনামা গ্রহীতা সমঝোতায় আপনার বিপক্ষে কাজ করলে ও আপনার কিছু করার নাই
    বিদেশে বসে, আপনি স্ত্রীকে ঘরে আনতে চাইলেও যদি পাওয়ার গ্রহীতা বলে না আমি
    চাই না তাহলে আপনার প্রদত্ত পাওয়ার বাতিল করতে অনেক সময় দরকার হবে কিন্তু
    ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
  • তালাকের বালাম বইয়ে তালাক প্রদানকারির স্বাক্ষরের স্থান আছে মোক্তারের
    সাইনের কোন স্থান নাই।
  • পাওয়ার অব এ্যাটর্নি ২০১২ আইন এবং বিধিমালা ২০১৫ এর মধ্যে বিদেশ থেকে
    তালাকের ক্ষমতা দেয়া না দেয়ার বিষয় উল্লেখ না থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব
  • তাই দেশে এসেই তালাক দেয়াই আইন এবং বাস্তবতাসম্মত।

ইসলামে মুত্তা বিবাহ

  • শিয়া আইনে বৈধ
  • সুন্নী আইনে নিষিদ্ধ
মুত্তা বিবাহ নির্দিষ্ট শর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবাহ করা। সময় অতিবাহিত
হলে সাথে সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শিয়া মুসলিমরা এই বিবাহে অভ্যস্ত।
শর্ত এবং নিয়মাবলী
  • চুক্তি থাকবে এবং ইজাব ও কবুল হবে
  • পুরুষ আহলে কিতাব এবং অগ্নিপুজারিকে এই বিবাহ করতে পারবে। তবে এর বাইরের
    কাউকে করা যাবে না।
  • তবে মহিলা হলে মুসলিম ছাড়া অমুসলিম কে করতে পারবেন না।
  • এই চুক্তিতে নির্দিষ্ট সময় থাকে, সময় শেষ হলে সাথে সাতে বিচ্ছেদ হয়ে
    যাবে।
  • সময়ের পূর্বে স্বামী চাইলে হেবা –ই মুদ্ধাত করে সময়ের আগেই বিচ্ছেদ করতে
    পারে।
  • মোহরানা ঠিক থাকলে বিবাহ সঠিক তবে মোহরানা ঠিক আছে কিন্তু শর্ত নাই তাহলে
    বিবাহ স্থায়ী হ্যে যাবে ← দৈহিক সম্পর্ক হলে সম্পূর্ণ মোহরানা পাবে না হলে
    অর্ধেক
  • বাচ্ছা হলে সে বৈধ হবে।

ইসলামে হালালা বিবাহ

খোলা তালাক এবং তালাকে আহসান ছাড়া অন্যভাবে তালাক হলে ইসলামী গত ভাবে সেই
স্ত্রী আর স্বামির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবৃদ্ধ হতে পারবে না যতদিন না তার অন্য
লোকের সাথে তার বিবাহ না হচ্ছে এবং সেখান থেকে তার স্বাভাবিক বিবাহ বিচ্ছেদ বা
স্বামী মারা না যাচ্ছে। এই যে অন্য জায়গায় বিবাহ হওয়া এবং তালাক পাপ্তা
হওয়া এটাই হালাল। তবে বাস্তবে দেখা যায় এই হালাল চুক্তি ভিত্তিক করা হয় কোন
লোকের সাথে এক দিন কয়েক দিনের জন্য বিবাহ দেয়া হয় এবং দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার
পরে তালাক দেয়া হয়। এটাকে হালালা বলে পরে আগের স্বামীর সাথে বিবাহ দেয়া হয়,
যা ইসলামে অবৈধ।

দত্তক গ্রহণ এবং বাংলাদেশ এবং ধর্ম

  • বাংলাদেশের প্রচলিত আইন 
  • মুসলিম আইন
  • হিন্দু আইন

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দত্তক গ্রহণ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষণের শিকার নারীদের গর্ভে জন্ম হওয়া শিশুদের
পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের দত্তক দিতে ১৯৭২ সালে একটি বিশেষ আইন প্রণীত
হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শিশু পাচার বা ধর্মান্তরিত হবার ঘটনার প্রেক্ষাপটে
১৯৮২ সালে সরকার আইনটি বাতিল করে।
এখন শুধু ১৮৯০ সালের গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস আইনের অধীনে অভিভাবকত্ব নেয়া
যায় মাত্র। দত্তক গ্রহণ এবং অভিভাবক হওয়া এক জিনিস নয়৷

মুসলিম আইনে দত্তক

মুসলিম আইনে দত্তক গ্রহণ বলে কিছু নাই। তাই কারো সন্তানকে লালন পালন করে তাকে
নিজের পরিচয় দিলেই সে আপনার সন্তান হয়ে যাবে না। নিজের সন্তান না হলে সেই
সন্তানের বাবা-মায়ের নামে জায়গায় আপনার নাম দেয়া নিষিদ্ধ। তবে সন্তানের
অভিভাবক্ত নিয়ে লালন পালন করা সওয়াবের কাজ।

হিন্দু আইনে দত্তক

হিন্দু আইনে হিন্দু পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আইনসিদ্ধ। দত্তকএর কাজে
তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ
  • দত্তকদাতার ক্ষমতা থাকতে হবে
  • দত্তকগ্রহীতার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • এবং দত্তক বালকের দত্তকরূপে গৃহীত হবার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • হিন্দু আইনে কোন মেয়ে দত্তক নেয়া বা দেয়া যাবে না।
  • যদিও এখন ছেলে ও মেয়ে উভয়কে নেয়া হয়।
  • শুধু তাই নয় কারো যদি একটি ছেলে থাকে তাহলে দত্তক দেয়া অসিদ্ধ ৷
  • তবে আদালতের রায় আছে দত্তক দেয়া যাবে।

কে দত্তক দিতে পারবে?

  • দত্তক শুধু পিতা-মাতাই দিতে পারে মাত্র।
  • পিতার নিষেধ না থাকলে মাতা দত্তক দিতে পারে না ।
  • মহিলা বা বিধবা স্বামীর অনুমতি ছাড়া দত্তক দিতে পারে না ।
  • দত্তক সন্তান নিজ পিতা-মাতার যাবতীয় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে।

দত্তকগ্রহিতার ক্ষমতা

  • যদি কারো ছেলে, ছেলের ছেলে, ছেলের ছেলের ছেলে জীবিত থাকে তবু দত্তক নেয়া
    যাবে না।
  • তবে যদি এই তিন পুরুষের পরের কেউ থাকে তবে দত্তক গ্রহণ করা যাবে।
  • নিজের ছেলেকে অন্যের কাছে দত্তক দিলে সে দত্তক নিতে পারবে।
  • কারো যদি অন্ধ, বোবা, কুষ্ঠ রোগি ছেলে থাকে সে দত্তক নিতে পারবে।
  • জন্মান্ধ, জন্মমূক জন্মবধির কুষ্ঠ গ্রস্ত উন্মাদগ্রস্তকে দত্তক গ্রহণ করা
    যাবে না মহিলা বা বিধবা স্বামীর অনুমতি ছাড়া দত্তক নিতে পারে না ।
  • কারো ছেলে সন্ন্যাসী হলে সে দত্তক নিতে পারবে।
  • স্ত্রী গর্ভবতী থাকাকালীন দত্তক নেয়া যাবে।
  • দত্তক পুত্র স্বাভাবিক সন্তানের মত উত্তরাধিকারী হবে
  • অবিবাহিত ১৫ বছরের অধিক বয়সের যেকোন ছেলে মানুষ দত্তক নিতে পারেন।
  • যে ব্যক্তির স্ত্রী মৃত সেও দত্তক নিতে পারে
  • একটি মাত্র পুত্র দত্তক গ্রহণ করা যাবে। সে মারা গেলে আবার দত্তক গ্রহণ করা
    যাবে।
  • পুরুষ কারো অনুমতি ছাড়াই দত্তক গ্রহণ করিতে পারেন, এমনকি স্ত্রীর ইচ্ছার
    বিরদ্ধেও।
  • নিজের সন্তান থাকলে দত্তক পুত্র নিজ সন্তানের এক-তৃতীয়াংশ পাবে

দত্তক বালকের কিছু বিষয় 

  • দত্তক বালককে পিতা-মাতা দত্তকগ্রহীতার কাছে নিজ হাতে হস্তান্তর করবে এবং
    দত্তকগ্রহিতা নিজ হাতে গ্রহণ করবেন, মৌখিকভাবে শুধু আদান-প্রদান করলেই হবে
    না;
  • দত্তক সগোত্রে, স্বজাতিতে এবং স্ববর্ণে হতে হবে;
  • দত্তক বালকের বয়সে কত হবে তা নির্ধারিত নাই, তাই কোথাও নাবালক, কোথাও
    বিবাহের আগে দত্তক নেয়ার নিয়ম আছে।
  • দত্তক ছেলে নিজ বাবার পরিবার থেকে বিচ্ছিন হয়ে যাবেন, কোন ধর্মীয় কাজে
    যোগ দিতে পারবে না
  • তবে তাদের রক্তসম্পর্ক বজায় থাকবে তাই নিষিদ্ধ সম্পর্কে বিবাহ করতে পারবেন
    না৷
  • দত্তক গ্রহণের আগে যদি কোন সম্পদ পেয়ে তাকে তা তার বলে গণ্য হবে। পিতার
    মারা যাবার পরে মা দত্তক দিলে পিতার সম্পত্তি পাবে কিন্তু মা মারা যাবার পর
    কিছুই পাবে না ৷
  • দত্তক ছেলে দত্তকগ্রহিতার সকল সম্পত্তিতে, পিতৃ পুরুষের সম্পত্তিতে এমনকি
    ভাইয়ের সম্পত্তিতেও উত্তরাধিকারী হবে।

পরিশেষে

পারিবারিক আইন বাংলাদেশে সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট এখানে শেষ করলাম । এই পোস্টে
যদি কোন জায়গায় ভুল হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন । এই পোস্টের লেখা গুলো
আইনের বিভিন্ন বই থেকে সংগ্রহ করে পোস্ট করেছি । 

Tag…
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ
ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২১, মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১, মুসলিম
পারিবারিক আইন ১৯৬১ pdf, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ ও তালাক
(রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২০,
ভারতীয় মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ, বিবাহ আইন ২০২২, বিবাহ
বিচ্ছেদ আইন ২০২১, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২২, মুসলিম আইন
pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ pdf, বিবাহ আইন
২০২২, বাংলাদেশের বিবাহ আইন ২০২১, মুসলিম বিবাহ আইন ১৯৭৪ বিবাহ বিচ্ছেদ আইন
২০২১, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, বিবাহ
বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন ১৯৬১ pdf, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন)
বিধিমালা ২০২২, মুসলিম বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা
২০২১, মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১, মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ pdf,
বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২২, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪, মুসলিম
বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০২০, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২০ pdf, মিউচুয়াল
ডিভোর্সের নিয়ম, হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ২০২১, ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে,
কি কি কারনে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, একতরফা তালাক, আমি আমার স্ত্রীকে
ডিভোর্স দিতে চাই, স্ত্রী তালাক দেওয়ার নিয়ম,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *