উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টন
উত্তরাধিকারের মূলকথা
একদিন সবাইকে এই মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে । ইসলামি উত্তরাধিকার শুরু হয় যেকোন ব্যক্তির মারা যাওয়ার পর । মারা যাওয়ার সময় যা সে রেখে যায় বা তার মৃতুর কারণে যা সে পায় তাই মীরাজ বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি । এই মীরাজ যারা পায় তাদেরকে বলে ওয়ারিশ আর এই মীরাজ ওয়ারিশদের মাঝে বন্টনের প্রক্রিয়াকে বলে ফারায়েজ । এখানে আমাদেরকে মুসলিম ফারায়েজ শিক্ষার আগে মুসলমানদের বিষয়ে কিছু জানতে হবে ।
আমরা জানি, শিয়া ও সুন্নি এই দুই ভাগে প্রধানত মুসলিমরা বিভিক্ত আর এদের উত্তরাধিকার বন্টন নীতি কিছুটা আলাদা । এখানে আমরা সুন্নি ইসলামে হানাফি ফিকাহ নিয়ে আলোচনা করব, পরের অংশে আমরা প্রধানত চার ইমামের চার ফিকাহ মেনে চলে । যেমন
- হানাফি মাজাহাব ইমাম আবু হানিফার মতবাদ ।
- শাফেয়ী মাঝাব ইমাম শাফেয়ীর মতবাদ ।
- মালেকি ইমাম মালেকের মতবাদ ।
- হাম্বলি ইমাম আহাম্মদ ইবনে হাম্বলের মতবাদ ।
উপমহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের পারিবারিক বিষয়ে ইংরেজরা ১৯৩৭ সালে শরিয়া আইন প্রণয়ন করে যা বাংলাদেশের সংবিধান ১৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে প্রচলিত । তাই মুসলিম ফিকাহর পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের নাজির অনুসরণ করতে হবে ।
বাংলাদেশী হানাফি ফিকাহ অনুসরণ করা হয় তাই আমাদের আলোচনায় আমরা হানাফি বন্টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো ।
বাংলাদেশে উত্তরাধিকার বুঝার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা জেনে নিতে হবে
- ব্যক্তি জীবিত থাকতে তার সম্পত্তির উপর কোন ব্যক্তির উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয় না ।
- মুসলিম উত্তরাধিকার ব্যক্তি মারা যাবার পরে সৃষ্টি হয় । ব্যক্তি যে সময় মারা যায় তখন যারা জীবিত থাকে তারাই কেবল উত্তরাধিকার হন ।
- মায়ের সম্পত্তি, বাবার সম্পত্তি বলে কিছু নাই! সবকিছু মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি আর মৃত ব্যক্তির সাথে তার কি সর্ম্পক সেই হিসাবে সে অংশীদার হবে । ব্যক্তির সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি উত্তরাধিকারের মাঝে বণ্টন করতে হবে ।
- জীবিত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার কোন ছেলে-মেয়ে উত্তরাধিকার দাবি করতে পারে না ।
- যারা ফারায়েজ বণ্টন উত্তরাধিকারীদের শ্রেণীতে কোন ভাবেই সর্ম্পকযুক্ত নয়, তারা সম্পত্তি পাবে না । যেমনঃ শ্বশুর-শাশুড়ি,পুত্রবধু, পালক সন্তান প্রমুখ ।
উত্তারধিকার বণ্টনযোগ্য সম্পত্তি বের করার নিয়ম
- প্রথমে মৃতব্যক্তির কাফন-দাফনের যাবতীয় খরচ বের করতে হবে তার সম্পত্তি থেকে । কেউ এই খরচ বহন করলে সেটা ভিন্ন কথা ।
- মৃত ব্যক্তির দেনা বা ঋণ বা যাকাত দেওয়ার থাকলে তা দিতে হবে ।
- মৃত ব্যক্তির অছিয়ত থাকলে এবং তা কাফন-দাফন এবং ঋণ পরিশোধের পর মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশের বেশি না হলে তা দিতে হবে । তবে যারা স্বাভাবিক ভাবে ওয়ারিশ হবে তাদেরকে অছিয়ত করা বৈধ নয় । যদি কোন ব্যক্তি নিজ ওয়ারিশ বরাবর অছিয়ত করে মারা যায় এবং বাকি ওয়ারিশরা আপত্তি না করে তবে সেই অছিয়ত বাস্তবায়নে বাধা নাই ।
ফারায়েজের কিছু সাধারণ নিয়ম আগে জেনে নিতে হবে
১। একই শ্রেণীভুক্ত পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে। যেমন
- ছেলে মেয়ের দ্বিগুণ পায়।
- ভাই বোনের দ্বিগুণ পায়।
- স্বামী স্ত্রীর দ্বিগুণ পায়।
- মৃতস্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী যা পায়, মৃত স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামী দ্বিগুণ পায় ।
বাবা-মা সমান অংশ পান, ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে।
বৈপিত্রেয় ভাই-বোন সমান অংশ পান।
২। মৃতের নিকটবর্তী লোক দূরবর্তীকে বঞ্চিত করবে যেমন
- বাবা থাকলে দাদা বা ভাই-বোন কিছুই পাবে না
- ভাই থাকলে ভাইয়ের ছেলে পাবে না ৷
- মা থাকলে নানী কিছু পাবে না।
- দাদা থাকলে ভাই-বোন পাবে না। (শুধু হানাফি ফিকাহ)
৩। নিকটবর্তী দূরবর্তীর সমান বা এর চাইতে বেশি পাবে। কখনই কম বা বঞ্চিত হবে না।
৪। দুই সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি এক সম্পর্কযুক্তকে বঞ্চিত করবে।
- আপন ভাই থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই বঞ্চিত হবে।
- আপন বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে।
৫। জারজ সন্তান শুধু মায়ের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হবে। (হানাফি ফিকাহ)
৬। বোবা, অন্ধ, মানসিক রোগী, নাবালক ইত্যাদির জন্য তারা উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে না।
৭। হিজড়া বা যার লিঙ্গ জানা যায়নি তাকে মেয়ে হিসাবে গণ্য করা হবে।
৮। নিখোঁজ ব্যক্তি যতদিন না পাওয়া যাবে তার সম্পত্তি আলাদা করে রাখতে হবে, হানাফি আইনে ৯০ বছর হিসাব করা হয়েছে মানুষের গড় আয়ু তাই এই সময় সম্পত্তি ভাগ করা যাবে না।
কারা উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে
১। মৃতব্যক্তিকে হত্যাকারী, যদি সে ওয়ারিশ হয়, সে বঞ্চিত হবে।
২। ইসলামত্যগকারী।
৪। মৃত ব্যক্তির পূর্বেই কোন উত্তরাধিকারী মারা গেলে।
ফারায়েজের মূলভিত্তি
কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কেয়াস এই চারটির মাধ্যমে ঠিক করা হয় মীরাজ বণ্টনের মূলনীতি। বাংলাদেশের শরিয়া আইন ১৯৩৭ বলা আছে মুসলিমদির পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার বণ্টন হবে।
হানফি ফিকাহ মতে উত্তরাধিকারীগণ তিন ভাগে বিভক্ত
- জাবিল ফুরুজ বা নিৰ্দিষ্ট অংশভোগী
- আসাব বা অবশিষ্টভোগী
- জাবিল আরহাম বা দূরবর্তী আত্মীয়।
ফারায়েজে কে কতটুকু পাবে তা সুরা নিসা ১১-১৪ এবং ১৭৬ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে মোট ছয়টি অংশ এবং একটি অনুপাত দেয়া আছে।
কোরআনে উল্লিখিত অংশ এবং অনুপাত
কোরআনে ছয়টি অংশ-
- ১/২
- ১/৩
- ১/৪
- ১/৬
- ১/৮
- ২/৩
- অনুপাত ২ঃ১ ।
- বাবা
- স্বামী
- দাদা
- বৈপিত্রেয় ভাই
- মা
- মেয়ে
- স্ত্রী
- পৌত্রী (ছেলের মেয়ে
- আপন বোন
- বৈমাত্রেয় বোন
- বৈপিত্রেয় বোন
- নানি ও দাদি
আসাবা বা অবশিষ্ট ভোগী
আসবা বি নাফসিহি/সরাসরি অবশিষ্টভোগী
মৃত ব্যক্তির বংশধর লিষ্ট
১। মৃতের নিম্ন বংশধরঃ ছেলে/ছেলের ছেলে/ছেলের ছেলের ছেলে…. যত দূর যায়।
আসাবা বা অবশিষ্টভোগী
জাবিল আরহাম বা দূরবর্তী আত্মীয় সম্পত্তি বণ্টন
- মৃতের ছেলের মেয়ের নিম্ন বংশধর;
- মৃতের মেয়ের ছেলে বা মেয়ের বংশধর।
- নানা-নানি, দাদি ও তাদের বাবা মা। (যারা জাবিল ফুরুজ বা আসাবা নয়)
- ভাইয়ের মেয়ে, বোনের ছেলে-মেয়ে, বৈপিত্রেয় ভাই-বোনের সন্তান।
- যেমন-ফুফু, খালা, মামা
জাবিল আরহামদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
- জাবিল ফুরুজ এবং আসাবা শ্রেণীর কেউ জীবিত থাকলে এরা সম্পত্তি পাবে না। তবে শুধু যদি স্বামী/স্ত্রী একমাত্র উত্তরাধিকারী হয় তাহলে রদ্দ নীতিতে তারা সম্পত্তি ফেরত পায় না, তখন বাকি সম্পত্তি জাবিল আরহামের মাঝে বণ্টন করা হয়।
- জাবিল আরহামের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনে জাবিল ফুরুজের মত প্রথম শ্রেণীর কেউ থাকলে বাকি সকল শ্রেণী বঞ্চিত হবে। প্রথম শ্রেণীর কেউ না থাকলে কেবল তখন পরের শ্রেণী উত্তরাধিকারী হবে।
- আবার একই শ্রেণীর মধ্যে দুই ভিন্ন সম্পর্কের উত্তরাধিকারী হলে যিনি নিকটবর্তী উনি পাবেন দূরবর্তী সম্পত্তি পাবে না। এরা যাদের মাধ্যমে উত্তরাধিকারী হচ্ছে তারা জীবিত থাকলে যে পেত তার মাধ্যমে যিনি দাবিদার সেই পাবে, যেমন-মৃত ব্যক্তির যদি পৌত্রীর মেয়ে এবং দৌহিত্রীর ছেলে থাকে তাহলে সম্পত্তি পৌত্রীর মেয়ে পাবে কারণ পৌত্রী জীবিত থাকলে সেই সম্পত্তি পেত দৌহিত্র বঞ্চিত হত।
- জাবিল আরহামে সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ হবে চাই পুরুষ হোক বা নারী। মাথাপিছু মতবাদ হিসাবে যত মাথা তত ভাগ হবে।
কারা কখনো উত্তরাধিকারী হতে বঞ্চিত হন না
- মা, মেয়ে,স্ত্রী/স্বামী,পিতা ও ছেলে, এই পাঁচ জন ।
সম্পত্তি বণ্টনের নিয়ম
১। উত্তরাধিকারদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের প্রথম ধাপ হল আসহাবে ফুরুজ বা জাবিল ফুরুজ দেখা, কে কে আছে এবং এদের অংশ বের করা।
২। জাবিল ফুরুজ-এর অংশ দেয়ার পর থাকলে আসাবা পাবে, না থাকলে পাবে না। আর জাবিল ফুরুজের কেউ না থাকলে আসাবা/অবশিষ্টভোগী সমস্ত সম্পত্তি পাবে।
৩। জাবিল ফুরুজের অংশ দেয়ার পর আসাবা বা অবশিষ্টভোগী না থাকে সম্পত্তি আবার জাবিল ফুরুজকে দেয়া হবে।
জাবিল ফুরুজ (স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া) এবং আসাবার কেউ না থাকলে তখনি কেবল আরহাম উত্তরাধিকারী হবে।
পিতা হিসাব উত্তরাধিকার
পিতা জাবিল ফুরুজ এবং আসাবা উভয় প্রকারের ওয়ারিশ হয়ে থাকে পিতা কখনো বঞ্চিত হবেন না।
- ১। মৃতব্যক্তির ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে পিতা পাবেন ১/৬
- ২। মৃতব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকলে ১/৬ পাবে এবং মেয়ে বা ছেলের মেয়েকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা আসাবা হিসাবে পাবে।
- ৩। মৃতব্যক্তির ছেলে বা ছেলের ছেলে বা মেয়ে বা ছেলের মেয়ে না থাকলে পিতা জাবিল ফুরুজের অন্য কেউ থাকলে তাদেরকে দেয়ার পর আসাবা হিসেবে সমস্ত সম্পত্তি পাবে।
দাদা হিসাবে অংশ
- মৃতব্যক্তির ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে দাদা পাবেন ১/৬
- মৃতব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকলে ১/৬ এবং মেয়ে বা ছেলের মেয়েকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা আসাবা হিসাবে পাবেন।
- মৃতব্যক্তির ছেলে বা ছেলের ছেলে বা মেয়ে বা ছেলের মেয়ে না থাকলে পিতা জাবিল ফুরুজের অন্য কেউ থাকলে তাদেরকে দেয়ার পর আসাবা হিসাব সমস্ত সম্পত্তি পাবে।
- মৃতব্যক্তির পিতা থাকলে দাদা বঞ্চিত হবেন।
স্বামীর অংশ
দুই প্রকারের অংশ হতে পারে-
- ছেলে-মেয়ে থাকলে স্বামী পাবেন ১/৪
- ছেলে-মেয়ে না থাকলে স্বামী পাবেন ১/২
বৈপিত্রেয় ভাইয়ের অংশ
তিন প্রকারের অংশ হতে পারে-
- একজন হলে ভাই ১/৬
- একাধিক হলে ভাই ১/৩
- মৃতব্যক্তির সন্তান, পিতা দাদা থাকলে বঞ্চিত হবেন।
স্ত্রীর অংশ
স্ত্রী কখনো বঞ্চিত হন না। দুই প্রকারের অংশ হতে পারে-
- সন্তান থাকলে ১/৮
- সন্তান না থাকলে ১/৪
- একাধিক স্ত্রী থাকলে তারা এই অংশ ভাগ করে নিবে।
মেয়ের অংশ
মেয়ে হিসাবে তিন প্রকারের অংশ হতে পারে
- এক মেয়ে হলে মোট সম্পত্তির ১/২ পেতে পারে
- একাধিক মেয়ে হলে ২/৩
- মেয়ের সাথে এদের ভাই থাকলে
মায়ের অংশ
মায়ের অংশ দুটি হতে পারে
১। মৃতের ছেলে মেয়ে থাকলে মা ১/৬ ভাগের এক ভাগ পাবেন।
২। মৃতের সন্তান নাই কিন্তু একের অধিক ভাইবোন থাকলে মা ১/৬ পাবেন।
৩। মৃতের ছেলেমেয়ে না থাকলে এবং একের অধিক ভাই বা বোন না থাকলে মা মোট সম্পত্তির ১/৩ পাবনে৷
৪। যদি মা আর বাবাই একমাত্র উত্তরাধিকারী হয় তাহলে মা ১/৩ পাবেন।
৫। যদি মা বাবা আর স্বামী/স্ত্রী উত্তরাধিকারী হয় তাহলে প্রথমে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দিয়ে বাকি সম্পত্তি থেকে মা ১/৩ পাবেন।
আপন বোনের অংশ
৫ প্রকারের হতে পারে
- এক বোন হলে ১/২ পেতে পারে
- একাধিক হলে ২/৩ পেতে পারে
- এদের সাথে ভাই থাকলে ২:১ অনুপাতে আসআবা হবে
- বোনের সাথে কন্যা বা পৌত্রী থাকলে বোন আসাবা হবে।
- পিতা, দাদা, ছেলে, বংশধর থাকলে বোন বঞ্চিত হবে।
বৈমাত্রেয় বোনের অংশ
এর সাত প্রকারের হতে পারে
একাধিক হলে ২/৩
আপন বোন একজন থালে বৈমাত্রেয় বোন ১/৬ পাবে
একের অধিক আপন বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে
তবে বৈমাত্রেয় ভাই থাকলে এরা ভাইয়ের সাথে ২:১ অনুপাতে আসাবা হবে
পিতা দাদা ছেলে সন্তান থাকলে বঞ্চিত হবে
বৈপিত্রেয় বোনের অংশ
এর তিন প্রকারের অংশ হতে পারে
- একজন হলে ১/৬
- একাধিক হলে ১/৩
- পিতা, দাদা, ছেলে, মেয়ে থাকলে এরা বঞ্চিত হবে।
নানি দাদির অংশ
দাদি-নানির ২ অবস্থান
- পিতৃ বা মাতৃসম্পর্কের এক বা একাধিক যাই হোক ১/৬ অংশ পাবে।
- মৃত ব্যক্তির মা জীবিত থাকলে নানি বঞ্চিত হবে। তবে পিতা জীবিত থাকলে দাদি বঞ্চিত হবে।
পৌত্রী/ছেলের মেয়ের অংশ
এটি প্রথমে আমরা হানাফি ফিকাহ ও পরে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ফলে যা বণ্টন হবে তা দেখব। মূল হানাফি আইনে ছয় প্রকারে হতে পারে
- একজন হলে ১/২
- একাধিক হলে ২/৩
- ভাই থাকলে আসাবা
- একজন মেয়ে থাকলে ১/৬
- পুত্র থাকলে বঞ্চিত
- একাধিক কন্যা থাকলে বঞ্চিত
- এদের সাথে এদের ভাই থাকলে ২:১ আসাবা হবে।
১৯৬১ সালের অধ্যাদেশের ফলে এই বণ্টন এখন প্রতিনিধিত্বের সূত্রে বণ্টন হবে, মানে তার বাবা বেঁচে থাকলে যা পেতো সে তার বাবার অংশ পাবে তবে এখানে তাদের ভাই থাকলে ২:১ অনুপাতে পাবে।
ফারায়েজের কিছু আরবী পরিভাষা
জেনে নেই, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে
মীরাজ
মৃতের রেখে যাওয়া সম্পত্তি যা বণ্টনযোগ্য হিসাবে ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টিত হয়।
ওয়ারিশ
যারাদের মাঝে মীরাজ বণ্টন হবে, উত্তরাধিকারী হিসাবে যারা সম্পত্তি পাবে।
ফারায়েজ
মীরাজ ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা প্রক্রিয়া। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার বৈধ উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টন প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।
হুজুব বা হজব
কোন ওয়ারিশের কারণে অন্য ওয়ারিশ আংশিক বা পুরাপুরি বঞ্চিত হলে তাকে হজব বলে, যেমন পিতা থাকলে দাদা বঞ্চিত।
আখিয়াফি
বৈপিত্রিয় ভাই মানে ভিন্ন ভিন্ন পিতা।
মুনাসাখা
সম্পত্তি বণ্টনের আগেই কেউ মারা গেলে তার প্রাপ্য অংশ এবং তার নিজের সম্পত্তি সব একসাথে ধরে তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেয়াকে মুনাসাখা বলে। যেমন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী, পরে স্ত্রী মারা গেলে উত্তরাধিকারী তার সম্পত্তি বণ্টনে স্বামী থেকে যে পেতো তা পৃথক বণ্টন না করে একসাথে বণ্টন করাই মুনাসাখা।
তাখারুজ
পরস্পরের অংশ বের করে নেয়া, সম্পত্তি বণ্টনের আগেই কেউ সকলের সম্মতিক্রমে কিছু সম্পত্তি নিয়ে বাকি মীরাজে তার দাবি ত্যাগ করলে একে তাখারুজ বলে।।
তাছহীহ
ওয়ারিশদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনে ভগ্নাংশ আসলে তা দূর করা প্রক্রিয়াকে তাছহীহ বলে। যেহেতু পূর্বে দশমিক পদ্ধতি ছিল না তাই এই তাছহীহ করা হতো, এখনকার আমলে দশমিক পদ্ধতি থাকায় তাছহীহ করা সময়ের অপচয় মাত্র।
ফাসির-বন্দী ব্যক্তি
মুরতাদ-ধর্মত্যাগী
যে মুসলিম ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে কাফের হয়ে যায় তাকে মুরতাদ বলে। মুরতাদ ব্যক্তি মুরতাদ থাকা অবস্থায় মারা গেলে তাহার মুসলিম থাকাকালীন সম্পত্তি মুসলিম উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টিত হবে। মুরদাত হওয়ার পরের সম্পত্তি বায়তুল মালে জমা হবে। আর মহিলা মুরতাদ হলে তার সম্পত্তি মুসলিম উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টিত হবে চাই সে মুরতাদ হওয়ার পরে অর্জন করুক। মুরতাদ ব্যক্তি কোন মুসলিমের ওয়ারিশ হবে না।
মফকুদ-নিরুদেশ ব্যক্তি
যে ব্যক্তি জীবিত নাকি মৃত এই বিষয়ে কোন খবর পাওয়া যায় না তাকে মফকুদ বলে। এই ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন করা যাবে না এবং সে তার কোন উত্তরাধিকারী হতে সম্পত্তি পাবে না। নিরুদেশ ব্যক্তি বিষয়ে হানাফি ফিকাহ ৯০ বছর গড় আয়ু হিসাব করে তাই ৯০ বছর পর তার সম্পত্তি সে সময় যারা জীবিত থাকবে তাদের মাঝে বণ্টিত হবে।
হামল-গর্ভের সন্তান
সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তি বণ্টন না করাই উত্তম। অনেক সময় একাধিক সন্তান গর্ভে থাকতে পারে, ছেলে বা মেয়ে থাকতে পারে। ভূমিষ্ট হওয়ার আগে মারা যেতে পারে। একান্তই বণ্টনের দরকার হলে ছেলে সন্তান হিসাব
খুনছা-হিজড়া ব্যক্তি
- লব ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে উপরের সংখ্যা
- হর ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে নিচের সংখ্যা
- মাসায়ালা ফারায়েজ করার সময় সম্পত্তি কত ভাগ করা হবে তা বের করার নিয়ম।
- লসাগু দুই বা ততোধিক সংখ্যার মধ্যে যে সংখ্যাটি সাধারণ বা কমন এবং যে সংখ্যাগুলো আনকমন তাদের গুণ ফলকে লসাগু বলে।
- সহোদর ভাই-একই বাবা মা হতে যে ভাই।
- বৈমাত্রেয় ভিন্ন মায়ের কিন্তু একই বাবার ছেলে-মেয়ে
- বৈপিত্রেয় ভিন্ন বাবার কিন্তু একই মায়ের ছেলে-মেয়ে
- পৌত্র ছেলের ছেলে
- পৌত্রী ছেলের মেয়ে
- দৌহিত্র মেয়ের ছেলে
- দৌহিত্রী মেয়ের মেয়ে
- কালালা যার কোন ছেলে-মেয়ে বা ছেলের ছেলে বা মেয়ে বা বাবা বা দাদা নাই।