ভূমি জরিপ কি – What is a land survey?
ভূমি জরিপ কি
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে জমি পরিমাপ করে ম্যাপ ও নকশা প্রস্তুত করাই ভূমি জরিপের কাজ । কোন জমি কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে কত টাকা খাজনা আদায় করা যাবে তাই মূলত জরিপ কাজ বলে । খতিয়ানকে স্বত্বর লিপিও বলা হয় খাজনা আদায়ের মাধ্যমে এই খতিয়ানে নাম না থাকলে আইনগত নানান সম্যসার মুখামুখি হতে হয় জমির মালিককে ।
ভূমি জরিপের কাজ উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত হয় । জরিপের মাধ্যমে নকশা এবং খতিয়ান উভয়ই প্রস্তুত করা হয় । আসুন দেখি জরিপের বিভিন্ন ধাপ
ভূমি জরিপ পদ্ধতি ও স্তরসমূহ
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় আধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪ (১) ধারা এবং ১৮৭৫ সালের সার্ভে এ্যাক্টের ৩ ধারা মোতাবেক সরকার কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট এলাকা/মৌজার জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন । জরিপ কার্যক্রম কতিপয় সুনির্দিষ্ট স্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা থাকে ।
প্রচার
কোন মৌজায় জরিপ কাজের প্রথম ধাপ হল জরিপ কাজের প্রচার, মাইকিং, নোটিশ ইত্যাদির মাধ্যমে জন-সাধারণকে অভহিত করা হয় । প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সেটেলমেন্ট অফিস আছে ।
ট্রার্ভাস জরিপ (Travers)
কোন মৌজার ৩৩% এর বেশি প্লট পরিবর্তিত হলে একটি নতুন প্লেন সিটে ট্রাভার্স জরিপের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুত করতে হয় । এরূপ সিটকে পি-৭০ সিট বলে । একজন ক্যাম্প অফিসারের নের্তৃত্বে ট্রাভার্স সার্ভেয়ার কম্পিউটার ও কতিপয় খালাসীসহ একটি ট্রাভার্স দল গঠন করে ট্রাভার্স জরিপ সম্পন্ন করা হয় । ট্রাভার্স সার্ভেয়ার থিওডোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে ট্রাভার্স স্টেশন চিহ্নিত করে বাশের খুটি পুতে দেন । চিহ্নিত বাঁশের খুটিগুলো কম্পিউটেশনের মাধ্যমে গোলাকার চাদা আকারে মোটা সিটে সন্নিবেশিত করে কিস্তোয়ার কাজ করার জন্য সিটগুলো সহকারী সেটেলমেন্ট ইফিসারের নিকট সরবরাহ করা হয় ।
পি-৭০ সিট কি
পি-৭০ সিট একটি আয়তাকার ঘরযুক্ত বিশেষ কাগজ, যার মধ্যে ৫৬০ স্কয়ার ইঞ্চি জায়গা থাকে । এখানে পাশাপাশি ২০টি এবং উপরে নিচে ২৮ টি ঘর থাকে ।
ব্লু প্রিন্ট সিট কি
ব্লু প্রিন্ট নীল কালিতে ছাপানো আগের জরিপের প্রতি সিটের ২টি নকশা । এর একটি পাতলা কাগজে আর একটি মোটা কাগজে ছাপানো হয় । মোটা কাগজটি মূল সিট আর পাতলাটি মাঠ হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
কিস্তোয়ারা
একটি মৌসুমী আমিনদল পি-৭০ সিটে অথবা ব্লু-প্রিন্ট কিস্তোয়ার সম্পন্ন করে থাকেন । নকশায় ৩৩% এর কম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাবেক নকশার ব্লু-প্রিন্ট সিটে কিস্তোয়ারা করা হয়ে থাকে । মৌসুমী আমিন সার্ভে যন্ত্রপাতির সাহায্যে প্লট-টু-প্লট জরিপ করে নকশা প্রস্তুত করে থাকেন । কিস্তোয়ার মাধ্যমে মৌজা নকশায় মৌজায় প্রতিটি ভূমিখন্ডার অবস্থাগত প্রতিচ্ছবি নির্ধারিত স্কেলে (সাধারণত ১৬” = ১ মাইল স্কেলে) অংকন করা হয় ।
খানাপুরি
এস্তরে কিস্তোয়ারকৃত ভূমিখন্ডের দাগনম্বর দেওয়া হয় । এ নকশায় ভূমিখন্ডগুলো উত্তর-পশ্চিম কোন হতে নাম্বারিং শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব কোনে এসে শেষ হয় ।
এ স্তরে খতিয়ান খোলা হয়, খতিয়ান মালিকের নাম, ঠিকানা, জমির শ্রেণী, পরিমাণ, দাগনম্বর ইত্যাদি সন্নিবেশ করা হয় । সরদার আমিন, বদর আমিনের সহায়তায় উপস্থিত ভূমিমালিকদের কাগজ ও বক্তব্য পর্যালোচনাক্রমে খতিয়ান প্রণয়ন করেন । খতিয়ান ধারাবাহিক নম্বর দিয়ে খুলতে হয় । ১ং খতিয়ানে সরকারের খাস জমি কালেক্টরের নামে এবং ১/১ খতিয়ানে অর্পিত সম্পত্তি কালেক্টরের রেকর্ড করা হয় । ১ ও ১/১ খতিয়ানে লেখার পর পরবর্তী গুলো রেওয়াজ অনুযায়ী এ কোন সরকারি/আধা সরকারি বিভাগের নামে আগে বা পরে লেখা যেতে পারে । সর্বশেষে সাধারণ ভূমিমালিকদের খতিয়ান খুলতে হয় ।
বুঝারত
খানাপুরি স্তরে প্রণীত খতিয়ানে অংশ অনুযায়ী জমির পরিমান লিখে ভূমি মালিকগণের নাম, জমির পরিমাণসহ সকল তথ্য সন্নিবেশে করে ভূমি মালিকগনকে বুঝিয়ে দিয়ে খতিয়ানের একটি অনুলিপি সরদার আইন তারিখসহ স্বাক্ষর প্রদানকরে সরবরাহ করে থাকেন । খতিয়ানের এ অনুলিপিকে পর্চা বলে । এ স্তরে খতিয়ান ও নকশায় কোন ক্রুটি থাকলে ভূ-মালিক মাঠে আমিনের নিকট নির্ধারিত ফরমে (বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬৫) বিবাদকেস (ডিসপুট) দাখিল করতে পারেন । এ ক্ষেত্রে কোন কোর্ট ফি লাগে না । হলকা অফিসার (উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার) পরবর্তী পরিদর্শক দিবসে পক্ষগণকে শুনানী দিয়ে ডিসপুট নিষ্পত্তি করবেন ।
তসদিক (Attestation)
প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ২৮ বিধি মোতাবেক রাজস্ব ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার উপজেলা পর্যায়ে অথবা ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্যাম্প স্থাপন করে কর্মসূচি দিয়ে ভূমি মালিকদের উপস্থিতিতে প্রতিটি খতিয়ান লাল কালিতে সত্যায়ন করবেন । কোন ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে ভূমিমালিক নির্ধারিত ফরমে (বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬৫) ডিসপুট দাখিল করতে পারেন । ডিসপুট দাখিলের জন্য কোন কোর্ট ফি লাগে না । তসদিক অফিসার পক্ষগণকে শুনানি দিয়ে ডিসপুট নিষ্পত্তি করবেন ।
খসড়া প্রকাশনা (Draft Publication)
প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ২৯ বিধি মোতাবেক খসড়া প্রকাশনা দেয়া হয় । খসড়া প্রকাশনাকালে কমপক্ষে ১ মাস ডি পি খতিয়ান ভূমি মালিকের দেখার জন্য খোলা থাকে । ডি পি খতিয়ানে কোন ভূলক্রুটি থাকলে ভূমিমালিক নির্দিষ্ট ফরমে নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে আপত্তি কেস দায়ের করতে পারেন । ডি পি চলাকালীন আপত্তি কেস দায়ের করতে হয় ।
আপত্তি (Objection) প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩০
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ৩০ বিধি মোতাবেক আপত্তি অফিসার আপত্তি কেস নিষ্পত্তি করে থাকেন । আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে নোটিশ দিয়ে শুনানি প্রদান করে আপত্তি কেস নিষ্পত্তি করে থাকেন । আপত্তি অফিসার রায় প্রদানের সাথে সাথে খতিয়ান ও নকশায় (প্রয়োজনে) সংশোধন করবেন । কোন পক্ষ প্রয়োজন হলে নকশা সংশোধনের জন্য বদরের আবেধন করতে পারেন ।
আপত্তির রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ রায়ের নকল সংগ্রহ করে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর অফিসারের নিকট আপিল কেস দায়ের করতে পারেন ।
আপিল (Appeal) প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩১
৩০ বিধি মোতাবেক দায়েরকৃত আপত্তি মামলার রায়ে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩১ বিধি মোতাবেক আপিল কেস দায়ের করতে পারেন । এরূপ আপিল উক্ত উক্ত আপত্তির রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে দায়ের করতে হয় । আপিল অফিসার নির্ধারিত কর্মসূচি মোতাবেক কমপক্ষে ৭ দিনের পূর্বে পক্ষগণকে নোটিশ দিয়ে শুনানি করে আপিল কেস নিষ্পত্তি করবেন ।
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩২ ফাইনাল রের্কড প্রস্তুত
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩০ এবং ৩১ এর অধীন যাবতীয় আপত্তি এবং আপিল সমাপ্ত হলে এবং সেই অনুযায়ী যাবতীয় রের্কড সংশোধন করা হলে ফাইনাল রের্কড প্রস্তুত করা হয় ।
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩৩
ফাইনাল রের্কড প্রকাশ করে ৩০ দিনের জন্ম উন্মুক্ত রাখতে হবে ।
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩৪
ফাইনাল রের্কড প্রকাশের ২ মাসের মধ্যে রেভিনিউ অফিসার সেই প্রকাশিত রের্কড সার্টিফাইড করে দিবেন । সরকার গেজেটের মাধ্যেমে এই সার্টিফাইড রের্কড কে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ।
প্রজাস্বত্ব বিসধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৩৫
ফাইনালি প্রশাশিত রের্কড অফ রাইট এর মধ্যে লিখিত সব তথ্য সত্য বলে ধরে নেয়া হবে যতক্ষণ তা মিথ্যা প্রমাণিত না হয় ।
প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৪২
রেভিনিউ অফিসার যে কোন মৌজার রের্কড আংশিক বা সর্ম্পূন্ন নতুন করে জরিপ করার আদেশ নিতে পারেন ।
১। প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৪২
যদি ফাইনাল রের্কড অফ রাইট প্রকাশের আগে কোন প্রতারণার মাধ্যমে কোন পরির্বতন করা হয় পক্ষদ্বয়কে নোটিশ করে তা সংশোধন করতে পারেন ।
২। প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ ধারা ৪২
ফাইনাল রের্কড প্রকাশের আগে যদি করনিক ভুল থাকে তা সংশোধন করতে পারেন এই ধারায় ।
গেজেটের পর খতিয়ান সংশোধন
- খতিয়ানে করনিক ভুল
- অংশের ভুল হলে এসি ল্যান্ডের কাছে আবেদন করে ঠিক করা যাইয় ।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদনপত্র বিশ টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হয় ।
- যাবতীয় কিছু ঠিক থাকলে খতিয়ান সংশোধন করা হয় ।
- জমি অন্যের নামে বা আওংশ কম হলে সেই মৌজা গেজেটের এক বছরের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে ১০০০ টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করতে হবে ।
- বিশেষ প্রয়োজনে এক বছর আরো সময় পাওয়া যায় ।
- সেই এলাকায় এই ল্যাড সার্ভে ট্রাইবুনাল না থাকলে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে ।
- অনেক পুরাতন খতিয়ান হলে এবং মালিকানা থাকলে, জমি দখলে থাকলে দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা করে প্রতিকার পাওয়া যায় ।
মামলা না করেই কিছু ভুল সংশোধন করা যায়
মামলা না করেই এসিল্যান্ডের কাছে আবেদন করে কিছু ভুল সংশোধন করা যায় ।
প্রিয় ভাই/বোন আজকের পোস্ট এখানে শেষ করলাম । পরবর্তী অন্য কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হবো । আজকে যে পোস্ট করলাম এই লেখাগুলো বিভিন্ন বই থেকে সংগ্রহ করে লিখেছি । আজকের লেখাগুলো যদি ভালো লাগে সেয়ার করবেন । ধন্যবাদ