অনুষ্ঠানের বক্তব্য

মে দিবস | আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের বক্তব্য – International Workers Day Speech

মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস । শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের
রক্তঝরা দিন । কল-কারখানা তখন গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের গোটা জীবন । অসহনীয় পরিবেশে
প্রতিদিন ১২ ঘন্টা কাজ করতে হতো । 
দুনিয়ার মজদুর এক হো শ্লোগানে বিপ্লবের সেই বীজমন্ত্র পৌছালো কানে কানে । চীন,
ভিয়েতনাম, কোরিয়া, কিউবা, বিশ্বের নানা দেশে- রক্ত-ঝরানো শ্রমিকের পথ রুশ-বিপ্লবে
মেশে । পহেলা মের আত্মত্যাগে শ্রজীবী পেলো শিক্ষা শ্রমের মূল্য দিতেই হবে এটা নয়
প্রাণ-ভিক্ষা ।

মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়

১২ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ঘন্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিন রাস্তায় নামেন যুক্ত
রাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ।  আর এই শ্রমিকদের ওপর গুলি
চলে । এতে ১০ জন নিহত হন । তাঁদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবতীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ
গোটা বিশ্বের ৮ ঘন্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয় ।
সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১মে আন্তর্জাতিক
শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং
শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিত ভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন
করে । বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটি দিন ।
সপ্তাহজুড়ে কাজ করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছিলো । শ্রমজীবি শিশুরা হয়ে
পড়েছিল কঙ্কালসার । তখন দাবি উঠেছিল, কল-কারখানায় শ্রমিকের গোটা জীবন কিনে নেওয়া
যাবে না । দিনে শ্রমঘন্টা ৮ করার দাবিতে শুরু হোয়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১লা মে
শ্রমিকরা ধর্মঘট আহবান করে । প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ ওই সমাবেশে অংশ নেয় ।
পরবতীতে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ছয়জনকে
আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় । এতে
বিক্ষোভ আরো প্রকট আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । পরবতীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের
দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার । 
আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে গিয়ে একসময় পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের মিছিলে
এলোপাতাড়ি গুলি চালায় । এতে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিরস্ত্র শ্রমিক নিহত হন, আহত ও
গ্রেফতার হন আরো অনেক শ্রমিক ।

প্রথম মে দিবস কোথায় পালিত হয়

১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১মে
শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ।

পরবতী বছর অর্থ্যৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১মে বিশ্বব্যাপি পালন হয়ে আসছে মে দিবস বা
অন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ।
সারা বিশ্বে এতো উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হলেও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি?
শ্রম ছাড়া কোন কিছুই উৎপাদন করা যায় না, এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই । কিন্তু
কর্মঘন্টা কতক্ষন হবে? কতক্ষণ কাজ করলে একজন শ্রমিক কত মজুরি পাবে? কেকজন শ্রমিক
বৃদ্ধ হলে তাঁর অবসর জীবন কেমন যাবে?
এরকম অস্নগখ্য প্রশ্নের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে দাবি উঠেছিলো ৮ ঘন্টা কর্মদিবস চাই
। এই দাবির অন্তরালে ছিলো আর একটি দাবি, ৮ ঘন্টা কাজ করে এমন মজুরি চাই যেনো তা
দিয়ে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানসম্মত জীবনযাপন করতে পারেন । কিন্তু বরাবর
শ্রমিকদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবী নিষ্ঠুর ও রক্তাক্ত পথে দমন করতে চেয়েছে ধনিক শেণি
৮ ঘন্টার কর্ম দিবসের দাবি এবং কর্ম পরিবেশ কিছুটা উন্নত হলেও আজো শ্রমিকদের
পেশাগত জীবনে নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকারগুলো অর্জিত হয়নি । চলমান করেনা মহামারিতে
আবারও স্পষ্ট হয়েছে, এ বিশ্বের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক ও
সামাজিক নিরাপত্তা, মৌলিক মানবিক অধিকারগুলো কতটা অপ্রতূল ।

শ্রমিক দিবসের কবিতা

পৃথিবীতে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে এমন বৈষম্য যেন আর না থাকে । শ্রমিক যেন তাঁদের
ন্যায পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন । নারী শ্রমিকেরা যেন কাজের অনুকূল পরিবেশ পান ।
এই আশাবাদ ব্যক্ত করে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘মে দিনের কবিতা’ থেকে কয়েকটি
চরণ উল্লেখ করছি- 
চিমনির মুখে শোনো সারেন-শঙ্খ,
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য 
জীবনকে চায় ভালোবাসতে ।
প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,
মারণের পণ নখদন্তে
বন্ধন ঘুচে যাবে জাগবার ছন্দে,
উজ্জ্বল দিন দিক-অন্তে ।
সবাইকে আবারও মহান মে দিবসের বিপ্লবী শুভেচ্ছে জান্নাচ্ছি । বিশ্বে
শ্রেণিবৈষম্যের অবসান হোক ।