শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা – শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
আজ জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং আদর্শ শিক্ষক ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ১৩৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে আজকে আপনাদের কাছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলাম আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে ।
শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের বক্তব্য
প্রত্যেক দেশ তথা জাতীয় জীবনে এমন কিছু দিন আসে, যা কখনো ভোলা যায় না । বরং সেই দিনটি আমাদেরকে নব সঞ্জীবনী মন্ত্রে উজ্জীবিত করে । অনুপ্রাণিত করে নতুন অঙ্গীকারে । সেদিন আমাদের অনেক না বলা কথা, না পাওয়ার যন্ত্রণা, সব ভুলে বোঝা বুঝির অবসান ঘটে । অনেক অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের মধ্য দিয়ে সেদিন আমাদের অন্তরের শুদ্ধিকরণ ঘটে ।
এমনি এক স্মরণীয় দিন ৫ই সেপ্টেম্বর । এই দিনটি বাঙালি তথা আপামর ভারতবাসীর কাছে এক পবিত্রতম দিন । কারণ এই শুভ দিনটিতে জন্মেছিলেন ভারতমাতার ভারতরত্ন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ । যিনি একাধারে ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি তথ মহান শিক্ষক । এই মহান শিক্ষক রাধাষ্ণাণের জন্মদিনটি জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হল- দিনটি চিহ্নিত হলো শিক্ষক দিবস রূপে ।
তাই তো এই ৫ই সেপ্টেম্বর সারা ভারতবর্ষ তথা বাংলার প্রতিটি বিদ্যাঙ্গনে সাড়ম্বরে পালিত হয় শিক্ষক দিবস । আমাদের বিদ্যালয়েও পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস । এই দিবসে আমি সামিল হতে পেরে ও কিছু বলতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করি । প্রথমত গুরু বন্দনার মধ্য দিয়ে আমি আমার বক্তব্যটি শুরু করছি-
গুরু ব্রম্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বরঃ
গুরু সাক্ষাত পরম ব্রম্মা তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।
সর্বাগ্রে শতকোটি প্রণাম জানাই আদ্যগুরু পিতা মাতাকে । যাকে কেন্দ্র করে আজকের এই মিলন মন্দির রচিত হয়েছে সেই মন্দিরের ভগবান সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের প্রতিকৃতির পাদপদ্মে বিনম্র প্রণাম জানাই । নমস্কার জানাই আজকের সভায় উপবিষ্ট আমার সাক্ষাৎ ভগবান স্বরূপ শিক্ষক-শিক্ষিকা গনকে । যথাযোগ্য সম্মান, ভক্তি ও ভালোবাসা জানাই সভায় উপবিষ্ট সমস্ত সভ্যবৃন্দদের । ভালোবাসা জানাই আমার সহপাঠী তথা ভাই বোনেদের ।
ডক্টর আব্দুল কালাম বলতেন-
আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীতে শিক্ষকের চেয়ে
সমাজের জন্য মহান আর কোনও পেশা নেই ।
সেই সূত্র ধরেই আমি এবং আমরা স্মরণ করব সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে । এত প্রতিভা এত তেজস্বীতা এবং ধৈর্য্য বোধহয় কম মানুষের থাকে। ভারত মাতার এই মহান সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তামিলনাড়ুর পল্লী অঞ্চলে তিরুট্টানি গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাম্মণ পরিবারে । পিতা সর্বপল্লী বীরা স্বামী ও মাতা সিতাম্মা । মেধা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি । গ্রামের স্কুল থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন ।
যেমন মেধা, তেমনি নিরলস পরিশ্রমী ছিলেন । তিনি একে একে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজ, মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনা করেন । পরবর্তীকালে বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হন । এই সময় তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন । এগুলির মধ্যে অন্যতম হলো- The Philosophy of Rabindranath Tagore.
রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি সফল ব্যক্তি ছিলেন । ১৩ই মে ১৯৫২ সাল থেকে ১৩ই মে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন । ১৯৬২ সালে তিনি ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হন ।
বলাবাহুল্য তাঁর রাষ্ট্রপতি কার্যকালে তাঁর গুণব্ধ ছাত্র-ছাত্রী ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে, তিনি বলেন তাঁর জন্মদিনের পরিবর্তে এই ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে যেন পালন করা হয় । সেই হিসেবে ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয় এবং অদ্যাবাধি পালন করা হচ্ছে ।
একজন শিক্ষকই বন্ধু, দার্শনিক এবং পথ প্রদর্শক হতে পারেন । তাঁর ধারণায় শিক্ষকই পারেন আমৃত্যৎ কাউকে শিক্ষার দোড়গোরায় হাত ধরে নিয়ে যেতে । জ্ঞানের আলোকবর্তিকায় মনের চক্ষু উন্মিলীত করতে এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ গঠন একমাত্র শিক্ষকের মাধ্যমেই সম্ভব এ বিশাল যাত্রা পথে পাড়ি দেওয়া এ ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত ।
ডাঃ রাধাকৃষ্ণাণের মতে একজন শিক্ষক শুরু পাঠক্রমের ধারণাই তৈরী করেন না, সেই সাথে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পন্থা পদ্ধতিরও নির্দেশ দান করেন । শিক্ষকরাই পারেন একটা এবড়থেবরো পাথরকে প্রকৃত গড়ন দিয়ে সুন্দর মূর্ক্তি গড়তে । ছেলে মেয়েদের মধ্যে সুপ্ত অন্তনিহীত শক্তিকে জাগ্রত করে অমিতশক্তির অধিকারী করে তুলতে পারেন শিক্ষকই । কোন সময় শিক্ষক হবেন ছাত্রের বন্ধু, কখনো দার্শনিকের ভূমিকায় আবার প্রয়োজনে নির্দেশের ভূমিকায় শিক্ষার কোন শেষ নেই, এ জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া । শিক্ষক তাঁর সাধ্যের অতীত ছাত্রদের শিক্ষাদানে ব্যপৃত থাকবেন, তবেই শিক্ষকরা ছাত্রদ্বারা সঠিক মূল্যায়িত হবেন ডাঃ রাধাকৃষ্ণাণ বিশ্বাস করতেন ।
কিন্তু আজ ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কে অর্থের মানদন্ডে দাঁড়িপাল্লায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে । ফিকে হয়ে যাচ্ছে ছাত্র শিক্ষকের সুনিবিড় সম্পর্ক । হারিয়ে গেছে মূল্যবোধ, হারিয়ে গেছে সামাজিক দায়িত্ববোধ । সেজন্যই এখন দেখা যায় ছাত্রের দ্বারা শিক্ষকরা নিগৃহীত হচ্ছেন । এটা সমাজের ক্ষেত্রে কখনোই কাম্য নয় । কারণ সমাজ গড়ার কারিগর শিক্ষক এবং সমাজ গড়ার হাতিয়ার ছাত্র সমাজ যদি এক মেরুতে না থাকেন তাহলে সে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে । তাই আজ আমরা শুরু লোক দেখানো শিক্ষক দিবস পালন করবো না বরং নতুনভাবে সেই সম্পর্কের ভিতকে শক্ত করে এগিয়ে যাব আগামী দিনের নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে । আর সবাই মিলে বলবো-
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সবার জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ।
বন্ধুরা আজকের এই শিক্ষক দিবসের সহজ সরল সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলাম । আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে । এই বক্তব্যটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে সেয়ার করার অনুরোধ করলাম ।
tag..
শিক্ষক সম্পর্কে কিছু কথা, শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য, শিক্ষক নিয়ে বক্তব্য, প্রিয় শিক্ষক নিয়ে বক্তৃতা, শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু কথা, শিক্ষক দিবসের শিক্ষকের বক্তব্য, শিক্ষক দিবস সম্পর্কে দুটি বাক্য, শিক্ষক দিবসের উপস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের বক্তব্য, শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা pdf, শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য, শিক্ষক দিবসের ছোট বক্তৃতা, প্রিয় শিক্ষক নিয়ে বক্তৃতা, শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু কথা, শিক্ষক সম্পর্কে কিছু কথা, শিক্ষক দিবসের উপস্থাপনা,