কোষ্ঠকাঠিন্যে । কষা পায়খানা দূর করার উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কি সমস্যা হয়
পায়খানা কষা হচ্ছে? মলত্যাগ করার সময় ব্যথা করছে? এমন সমস্যা হলে ঘরোয়া ভাবেই কী
করে দ্রুত সমাধান করবেন, সেটা এই পোস্টে বলবো । আর সাথে কিছু টিপস শিখিয়ে দিবো
যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলস, গেঁজের মত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হওয়া থেকে
বাঁচতে পারেন ।
প্রথমে শুরু করছি সবচেয়ে কষ্টকর, আর্জেন্ট পরিস্থিতির সমাধান দিয়ে । পায়খানা চাপ
আসছে কিন্তু বুঝতে পারছেন যে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে আছে । এখন বাথরুমে গেলে
মলত্যাগে অনেক কষ্ট হবে, বৃথা হবে । এই অবস্থায় জোর দিয়ে বের করতে চান তাহলে
পায়ুপথের চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে । চামড়া ছিঁড়ে যাওয়াকে আমরা বলি গেঁজ । গেঁজ হলে
পায়খানা করতে গেলে অনেক ব্যথা হয় । অনেক রোগী এসে বলেন যে মলত্যাগের সময়ে ছুরির
ধারের মত ব্যথা হয় । আর গেঁজ একবার হলে কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন কষ্ট হতে থাকে । আর
একবার হয়ে সেরে গেলেও বার বার ফিরে আসতে পারে । এজন্য পায়খানা খুব শক্ত হলে জোর
করে মলত্যাগের চেষ্টা করবেন না ।
পায়খানা ক্লিয়ার করার সাপোজিটরি
আমি একটা ওষুধের নাম বলে দিচ্ছি, এটা আপনার পায়খানাকে ১৫ মিনিটের মধ্যে নরম করে
দিবে । আর পায়খানার রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাবে ।
ওষুধটার জেনেরিক নাম হচ্ছেঃ Glycerin Suppository . বিভিন্ন কোম্পানি
বিভিন্ন নামে বিক্রি করে । ওষুধের দোকানে বললেই চিনবে । এটা ওভার দা কাউন্টার
ওষুধ, প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পারবেন ।
এটা কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটা বুঝিয়ে দিই । Suppository টা একটু পানিতে ভিজিয়ে
নিবেন । তাঁরপর বাম কাত হয়ে শুয়ে হাটু ভাজ করে ওষুধটা পায়খানার বাস্তায় ঢোকাবেন ।
ঢোকানোর একটু পরেই খুব বেশি পায়খানার চাপ অনুভব করতে পারেন । কিন্তু তখনই বাথরুমে
যাবেন না । একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করবেন, ওষুধটা যেন আপনার মল নরম করতে পারে
সেজন্য কিছুক্ষন সময় দিতে হবে । অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার চেষ্টা করবেন । তবে
আপনার ওষুধের প্যাকেটে যদি এর থেকে বেশি বা কম সময় লেখা থাকে সেটা অনুসরণ করবেন ।
এই Suppository তেও যদি কাজ না হয়, তাহলে আরো পাওয়ারফুল সমাধান আছে । যেটা
ডাক্তার আপনার পায়ুপথে দিতে পারবেন । তাই এমন অবস্থা হলে ডাক্তারের কাছে চলে
যাবেন ।
পায়খানা ক্লিয়ার করার ঘরোয়া উপায়
আচ্ছা এভাবে তো একবারের জরুরী অবস্থার সমাধান হলো । এখন আপনার কাজ হলো পরের বেলায়
যেন আবার এমন জরুরী অবস্থা সৃষ্টি না হয় । তো পরের বেলায় যাতে পায়খানা শক্ত না
হয়, সেজন্য কয়েকটি সমাধান একন বলে দিচ্ছি ।
আমি প্রথমে ৩টা ন্যাচারাল উপায়ের কথা বলবো, তারপরে বলবো ওষুধের কথা । আমাদের লক্ষ
থাকবে এই ৩টা ন্যাচারাল উপায় একসাথে অবলম্বন করে কোষ্ঠকাঠিন্য একদম স্থায়ীভাবে
সারিয়ে ফেলা । যাতে করে ওষুধ ব্যবহার করা না লাগে । তবে ন্যাচারাল উপায়ে যদি
সমাধান না হয়, তখন আমরা ওষুধ ব্যবহার করবো । আর ওষুধের ক্ষেত্রেও আমি কম
পার্শ্বপতিকৃয়ার গুলো আগে ব্যবহারের পরামর্শ দিবো । তাহলে এখন ন্যাচারাল উপায়ে
চলে আসি ।
পায়খানা নরম হওয়ার উপায়
প্রথমে খেয়াল করেন, আপনার যে কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হলো, তাঁর আগে কি আপনি নড়াচড়া কম
করছিলেন? হাঁটাহাঁটি কম করছিলেন? নড়াচড়া বা হাঁটাহাঁটি কম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে
পারে । আমাদের মুখ থেকে পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত যে নালিটা সেটা সোজা করে যদি
টেনে ধরেন তাহলে প্রায় ৩০ ফুট লম্বা হবে ।
আমরা একেকজন সাধারণত ৫-৬ ফুট লম্বা । তাঁর মানে এই নালিটা আমাদের থেকেও ৫-৬ গুন ।
এই লম্বা যে নালি এটাতে খাবার থেকে মল প্রসেস হয়ে বের হওয়ার জন্য আমাদের হাটাচলা
সাহায্য করে । তাই ন্যাচারাল উপায়ে প্রথম স্টেপ হচ্ছে হাটাচলা করা । কমপক্ষে ৩০
মিনিট করার চেষ্টা করবেন এতে শরীরের নানাভাবে উপকার হবে ।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে পায়খানা শক্ত হতে পারে । কারণ পায়খানা নরম
করতে শরীরের পানি লাগে । তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পানির দিকে খেয়াল রাখবেন । যদি
দেখেন যে তেমন পানি খাচ্ছেন না, তাহলে পানি খাওয়ার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিবেন ।
হাটাচলা করলাম,পানি পান করলাম! তবে খাবারে আশ না থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে
মুক্তি পাওয়া কঠিন । কারণ পায়খানা নরম করতে খাবারে আঁশের প্রয়োজন হয় । এই জন্যই
আমি ৩টা পয়েন্টে ন্যাচারাল সমাধানের কথা বলেছি ।
কিভাবে খাবারে আশ বাড়াবেন
দুয়েকদিনের ভেতরেই আপনি হয়ত খাবারে পরিবর্তন আনতে পারবেন না । এই অবস্থায় খাবারে
আঁশের পরিমাণ বাড়ানোর একটা সহজ উপায় হল ইসবগুলের ভূষি খাওয়া । প্যাকেটে লেখা
অনুযায়ী পরিমাণমত নিয়ে পানিতে ভালভাবে গুলিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলবেন । চিনি
দেওয়ার কোন দরকার নাই । অনেকে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খান, সেটা সঠিক নিয়ম না ।
সঠিক নিয়ম হল সাথে সাথে খেয়ে ফেলা । দিনে ২ বেলা করে খাবেন ভরা পেটে । আর
ইসবগুলের ভুষি খেলে অবশ্যই দিনে ২লিটার পানি খাবেন । না হলে পেট ব্যথা করতে পারে
।আবার অল্প কিছু ক্ষেত্রে বড় জটিলতাও হতে পারে ।
যেমন দেখা গেছে রোগী কোষ্ঠকাঠিন্য জন্য ইসবগুলের ভুষি খেয়েছে, কিন্তু পানি কম
খাওয়ার কারণে নাড়িভূড়ির মুখ আটকে গেছে । সাধারণত ইসবগুলের ভুষি ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার
মধ্য কাজ শুরু করে । একটানা ৩দিন ব্যবহার করার পরেকোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোনও উন্নতি
না দেখেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন ।
খাবারে আঁশ বাড়ানোর জন্য ইসবগুলের ভুষি সাময়িক সমাধান কেবল এটা দীর্ঘদিন ধরে
খাওয়া যাবে না । তাতে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে
।
পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম
দুইটা ওষুধের কথা বলবো, এই দুইটাই ওভার দ্যা কাউন্টার ওষুধ । ডাক্তারের
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পারবেন ।
ল্যাক্টুলোজ
ইসবগুলের ভুষিতে যদি কাজ না হয় , তাহলে ঐটার বদলে বা তাঁর সাথেই আরেকটা ওষুধ খেতে
পারেন । জেনেরিক নাম হলঃ ল্যাক্টুলোজ (Lactulose) ।
বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে বিক্রি করে । ওষুধের দোকানে বললেই চিনবে ।
এটা ওভার দ্যা কাউন্টার ওষুধ, প্রেসক্রিপশিন ছাড়াই কিনতে পারবেন ।
এই ওষুধটা শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি টেনে নাড়িভুড়িতে আনে, ফলে পায়খানে নরম
হয় । সাধারণত ২দিনের ভেতরেই কাজ করে । ৪/৫ দিনে কোন উন্নতি না দেখেন তাহলে
ডাক্তারের সাথে কথা বলবেন ।
এই ওষুধটা দিনে ২ বেলা খাবেন । খালিপেট ভরাপেট দুইভাবেই খেতে পারেন । সাথ
এক্ষেত্রেও দিনে অন্তত ২ লিটার পানি পান করবেন ।
প্রায় সবাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এই ওষুধটা খেতে পারে । তবে Galactosaemia
নামের বিরল একটা রোগ থাকলে এটা খাওয়া যাবে না । পেটে ব্যথা থাকলে খাবেন না । IBS
এর রোগীরাও এটা না খেলে ভালো ।
এই ওষুধের পার্শপ্রতিকৃয়া হিসেবে
পাতলা পায়খানা, পেট ফাপা, ঢেকুর বায়ুর সমস্যা, বমিভাব, বমি, পেট ব্যথা হতে পারে ।
সাধারণত এগুলো মৃদু হয় এবং কয়েকদিনে সেরে যায় । তবে বেশি হলে অবশ্যই দেরি না করে
ডাক্তারের সাথে কথা বলবেন ।
সোনাপাতা
কোষ্ঠকাঠিন্যের একটা দ্রুত প্রাকৃতিক সমাধান হল সোনা পাতা বা Sennal । বিভিন্ন
কোম্পানি বিভিন্ন নামে বিক্রি করে । এটাও ওষুধের দোকানে বললেই চিনবে । ওভার দ্যা
কাউন্টার ওষুধ প্রেসক্রিপসন ছাড়াই কিনতে পারবেন ।
মাত্র ৮-১২ ঘন্টায় এটা কাজ করে । রাতে খেয়ে ঘুমালে সকালেই অনেক সময় পেট পরিষ্কার
হয়ে যায় । গাছের পাতা আর ফল থেকে এই ওষুধ তৈরি করা হয় শক্তিশালি ওষুধ । নাড়িভুড়ির
দেয়ালের মাংসপেশিকে Stimulate বা সচল করে পায়খানা বের হতে সাহায্য করে । রাতে
খালি পেটে বা ভরা পেটা খাবেন আর দিনে অব্যশই দুই লিটার পানি খাবেন ।
পার্শপ্রতিকৃয়া হিসেবে পাতলা পায়খানা,পেট ব্যথা হতে পারে । সাধারণত অল্প হয়
কিছুদিনে সেরে যায় । প্রসাবের রঙ খয়েরি বা লালের মত হতে পারে, সেটা ওষুধ খাওয়া
বন্ধ করলে ঠিক হয়ে যায় ।
যারা সোনাপাতা খাবেন নাঃ
- পেটে তীব্র ব্যথা থাকলে ।
- পেটে ব্যথার সাথে বমিভাব বা বমি হলে ।
- পানি শূন্যতার লক্ষণ থাকলে যেমন প্রস্রাব কম বা গাড় দুর্গন্ধ যুক্ত হলে ।
- পেটে কোন জটিল অসুখ থাকলে যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিস বা অবস্ট্রাকশন ।
- ক্রন’স ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস থাকলে ।
-
কিডনি বা হার্টের রোগ থাকলে গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারী বা গর্ভধারণের পরিকল্পনা
করলে ।
কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে । ওষুধ ছাড়া তখন স্বাভাবিক পায়খানা হয় না । তাই এটা
শুধুমাত্র জরুরু অবস্থায় খাবেন ।
আর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে প্রথমেই এটা খাবেন না । আগে অন্তত ইসবগুলের ভুষি ট্রাই করে
দেখবেন ।
কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে । এগুলোকে Stimulant laxative বলে যার মধ্য আছে
bisacody । বাংলাদেশে duralax নামে পাওয়া যায়, ভারতে Dulcoflex সহ অনেক নামে
পাওয়া যায় । অনেকেই হয়ত ফার্মেসি থেকে কিনে এটা খান । তবে খেয়াল রাখবেন যাতে
এটা আপনার নিয়মিত অভ্যাস না হয় । জরুরি অবস্থায় খেলেও পরে ওষুধ ছাড়াই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর রাখার চেষ্টা করবেন ।
করবেন না । যখন দ্রুত সমাধান প্রয়োজন তখন অল্প কয়েকদিন ব্যবহার করবেন
।
কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন ।