মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
রমজান ২০২৪ |
রমজান মাসের ফজিলত ও আমল
রমজান মাস ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি একটি পবিত্র মাস,
ঈমানদার মুসলমান এই মাসের প্রতীক্ষায় দিন কাটায়, যে মাসে মুসলমানরা কোরআন
তিলাওয়াত করে, রোজা রাখে,বেশি বেশি ইবাদত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন
করে। রমজান মাসে অনেক ফজিলত এবং বরকত রয়েছে, যার মধ্যে আমি কয়েকটি উল্লেখ
করলাম ।
আসমানি কিতাবসমূহের সহিত রমজান মাসের বিশেষ সম্বন্ধ আছে । কারণ, প্রায় সমস্ত
আসমানি কিতাবই এই মোবারক মাসে নাযিল হয়েছে ।
- হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ছহীফা এই মাসের ১০ই তারিখে নাযিল হয়,
- হযরত দাউদের (আঃ) যবুর কিতাব এই মাসের ১৮ই তারিখে নাযিল হয়,
- হযরত মূসার (আঃ) তৌরাত কিতাব এই মাসের ৬ই তারিখে নাযিল হয়,
- হযরত ঈসার (আঃ) ইঞ্জীল কিতাব এই মাসের ১৩ই তারিখে নাযিল হয়,
আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কোরআন মজীদ, ফোরকানে হামীদ এই মাসেই লাওহে
মাহফুয হইতে হযরত জিব্রাঈলের (আঃ) নিকট গচ্ছিত হয় এবং এই মাসের ২৭শে রাত্রি
লাইলাউল ক্বদরে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) সর্বপ্রথম “সূরা আলাক” হযরত (সাঃ) এর উপর
নাযিল করেন ।
এই রাতের এবাদত হাজার মাসের এবাদত হইতেও উত্তম, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তাহাঁর
রহমতের দুয়ার খুলিয়া দেন । ইহার ফজিলত এত বেশি বলিয়াই দুনিয়ার মুসলমান এই
রাত্রিব্যাপিয়া আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকেন । এই মাসে কোরআন তেলাওয়াতে নেকি অন্য
মাসের চেয়ে অনেক বেশি । এই মাসের নফল নামাজ অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ নামাজের
সমতুল্য ।
পাক কোরআন আল্লাহ পাক বলেছেন যে, আমি তোমাদিগকে ভয়-ভীতি ও ক্ষুধা-তৃষ্ণা দ্বারা
পরীক্ষা করিব এবং আমি সবরকারী গণের সঙ্গে আছি । হযরত (সাঃ) বলেছেন যে, রোজা সবরের
অর্ধেক, আর সবর ঈমানের অর্ধেক । আরবীতে রোজাকে সওম বলে, সওম অর্থ বিরত থাকা (মন্দ
কাজ ও লোভ হইতে) রোজা মুসলমানের জন্য একটি কাঠোর সাধনা, ইহার পুরষ্কার বেহেশত
।
রমজান মাসের ফজিলত
গুনাহের ক্ষমাঃ রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা তাঁদের গুনাহের
জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করতে পারে । হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি রমজান
মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, তাঁর আগের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া
হবে ।
আল্লাহর ভয় ও অনুগত হওয়াঃ রমজান মাসের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে
তাকওয়া অর্জন করতে পারে। তাকওয়া হল
আল্লাহর ভয় ও অনুগত হওয়া। রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের পাপ কাজ
থেকে বিরত থাকে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেদ মেনে চলে ।
বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়াঃ রমজান মাসে বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং
জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজানের এক মাস মৃত ব্যক্তিদের কবরের আযাব
বন্ধ রাখা হয় । হাদিসে বর্ণিত আছে,
“যখন রমজান মাস আসে, তখন বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা
বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।”
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনঃ রমজান মাস হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস। রোজা
রাখা, কোরআন তিলাওয়াত করা, রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা এবং আল্লাহর স্মরণ
রাখার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। এই মাসে আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাওয়ার মাস, এই মাসে অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা চাইতে হলে আল্লাহর কাছে বেশি
বেশি নামাজ পড়ুন তাহলে যদি চায় তাহলে আপনার গুনাহ মাফ করে দিবে ।
রোজার ফজিলত
১। বেহেশতের ৮টি দরজা আছে, একটির নাম রাইয়ান (তৃপ্তি), এই দরজা দিয়া বেহেশতে
প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করিবে এক মাত্র রোজাদারগন ।
২। প্রকৃত রোজাদারদের পূর্ববর্তো সমস্ত গোনাহ মাফ হইয়া যায় ।
৩। রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে, একটি ইফতারের সময় ও অপরটি আখেরাতে আল্লাহ
পাকের দীদার লাভের সময় ।
৪। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ পাকের নিকট মেশক (কস্তুরী) হইতেও বেশি সুগন্ধময় ও
মনোরম বোধ হয় ।
৫। রোজাদারের নিদ্রা, এবাদত ও তাহাঁর চুপ থাকা তসবীহ স্বরূপ গন্য হয় ।
৬। রোজার মধ্যে হালাল বস্তু হইতে পরহেজ (বর্জন) করার ফলে হারাম বস্তু ও হারাম কাজ
ত্যাগ করা এবং আল্লাহর আদেশ এবং নিষেধ পালন করা সহজ হয় । রোজা মানুষকে বদ মেজাজ
হইতে বিরত রাখে ।
৭। আল্লাহ পাক বলেছেন যে, আদম সন্তানের নেক আমলের সওয়াব দশ হইতে সাতশত গুণ
পর্যন্ত দেওয়া হয়, কিন্তু রোজার অবস্থা সেইরূপ নয়, রোজা খাছ আমার জন্য, রোজাদার
কেবল আমার খুশীর জন্য কামনা, বাসনা ও পানাহার ত্যাগ করিয়া রোজা রাখে, সেই জন্য
আমি নিজে ইহার প্রতিদান দিব ।
৮। রোজা ফাকি দেওয়ার অভ্যাস দূর করে, যেহেতু রোজার দিন রোজাদার গোপনে পানাহার
করিলে কাহারও টের পাওয়ার উপায় নাই, কিন্তু রোজাদার তাহা করে না ।
৯। ধনী লোকেরা রোজার সময় গরীব লোকের ক্ষুধার কষ্ট প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করর সুযোগ
পায় ।
১০। আল্লাহ নিজে রোজাদার তিনি পানাহার হইতে মুক্ত । রোজাদারও দিনের বেলায় পানাহার
হইতে বিরত থাকেন, রোজার মাসে । আল্লাহ তায়ালার ছামাদিয়াতের (অভাবহীনতার) ফয়েজ
(শক্তি) রোজাদারের উপর বর্তে, তাঁরই ফলে রমজান মাসে রোজাদারের রিজিক বৃদ্ধি হয় ।
১১। যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, সে ব্যক্তি রোজাদারের সমতুল্য নেকী লাভ
করে, কিন্তু তাতে রোজাদারের নেকী হ্রাস হয় না ।
১২। সংসারের অজস্র দাবী মিটাইয়া, অঢেল খাদ্য সামগ্রী সম্মুখে রাখিয়া প্রলোভন পায়ে
ঠেলিয়া রোযাদারগণ সুদীর্ঘ একমাস কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, শুষ্ক
মলিন মুখ লইয়া ক্লান্ত দেহে নিজ নিজ কাজ করে । আল্লাহ পাক ফেরেশতাগণকে ডাকিয়া
বলেন- দেখ, আমার বান্দা কেবল আমার খুশীর জন্য কত সবর ও ত্যাগ করিয়াছে, আল্লাহর
করুণা সিন্ধু তখই উথলিয়া উঠে, খুশিতে বান্দার গোনাহ মাফ করিয়া দেন ।
১৩। খাওয়ার লোভ বড় লোভ, এই লোভ সংবরণ করা জীবনের বড় সংযম । রোজা রুহকে শক্তিশালী
করে, বিচার শক্তি ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে । রোজা রোগ দূর করে ।
পাঁচটি কাজে রোজার সওয়াব নষ্ট হয়
- মিথ্য বলা
- গীবত
- চোগলখুরী
- মিথ্যা কছম খাওয়া
- পরনারীর প্রতি কু-দৃষ্টি করা
হযরত (সাঃ) বলেছেন, যে রোজাদার মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ ছাড়িতে না পারে তাহাঁর রোজায়
আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই । হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, যে রোজার অনর্থক কাজ ও কথা
হইতে নিবৃত্তি নাই ও সংযম নাই, সে রোজায় কোন ফায়দা (লাভ) নাই । একদিকে উপবাস অন্য
দিকে পাপ কাজ ও সংযমহীন জীবন যাপন, এইরূপ রোজার স্থান ইসলামে নাই । উপবাস ও রোজা
এক নয় ।
রোজা আয়ু বৃদ্ধি করে
ডাক্তার ক্লাইভ মেকক মানবজীবন দীর্ঘায়ু করার একটি নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন,
তত্ত্বাটি নতুন একথা বলা চলে না । ইসলামী শরীয়তে ইহার সুনির্দিষ্ট বিধান রহিয়াছে
। তত্ত্বাটি এই– প্রাণীদেহ যতদিন বাড়িতে থাকে ততদিন বার্ধক্য আসিতে পারে না ।
শরীরের বর্ধন থামিয়া গেলেই ক্ষয় আরম্ভ হইয়া বার্ধক্য উপস্থিত হয়, সুতরাং
বার্ধ্যক্যের সূচনা থামাইয়া রাখিতে হইলে শরীরের বৃদ্ধি যাহাতে ধীর গতিতে চলিতে
থাকে তাহাঁর ব্যবস্থা করিতে হয় । কচ্ছপ দীর্ঘজীবী, এরা ১০০ বছত বাঁচিতে পারে ।
কারণ এদের দেহ দীর্ঘকাল যাবৎ মন্থর গতিতে বাড়িতে থাকে । মানুষের মত ২৫ বছরেই এদের
দৈহিক বৃদ্ধি শেষ হয় না । রোজার উপবাস ব্যতীত শরীরের বৃদ্ধিকে ধীরগতিসম্পন্ন করার
কোন ব্যবস্থা নাই । ডাঃ মেকক ইঁদুর নিয়া পরীক্ষা করিয়া ইহার সত্যপ্তা প্রমাণ
করিয়াছেন । আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে দীর্ঘ জীবন লাভ করার জন্য খাওয়ার প্রয়োজন
খুব বেশি নয় । “বেশি বাঁচবি ৎ কম খা” প্রবচনটি সত্য ।
রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
বছরে একটানা রোজা কেবল মানুষের আত্মারই উৎকর্ষ সাধন করে না, মানব দেহের উপরও উহার
প্রচুর প্রভাব প্রতিফলিত হয় । এক মাসের উপবাসে দেহের বিপুল পরিবর্তন হয়, তৎসঙ্গে
সংযম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন সহজ ব্যাপার নয়, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,
রাসায়নিক উপাদান বায়ু পিত্ত, কফ ও রক্তের ঘন্টায় ঘন্টায় অজ্ঞাতে পরিবর্তন হইতে
থাকে । প্রতিনিয়ত রোজাদারের হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া, রক্ত চলাচল, মূত্রগ্রন্থি ও
যকৃতের (লিভার) ক্রিয়া ও রক্তের নানাবিধ উপাদানের পরিবর্তন ঘটিতে থাকে । সারা বছর
শরীরে যে জৈব বিষ (টক্সিন) জমা হয়, সিয়ামের আগুনে এক মাসের মধ্যে তাহা পুড়িয়া
নিঃশেষ হইয়া রক্ত বিষমুক্ত হয় । আল্লাহ বলেছেন, “আন তাছুমূ খায়রুল লাকুম ইনকুনতুম
তা’লামুন ” । (রোজার কি উপকার ইহা যদি তোমরা জানিতে)!
রোজা ও বহুমূত্র বা ডায়াবিটিস
বহুমূত্র রোগ দেওয়ার পক্ষে রোজার উপবাস অমোঘ ঔষধ । এই রোগের টের পাওয়া মাত্র কয়েক
দিন রোজা রাখিলে এবং রোজার সময় (রাত্রিতে) প্রচুর পানি পান করিলে রক্তে ও প্রসাবে
চিনির ভাগ কমিয়া আসে ও রক্তে ক্ষারের ভাগ বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশের প্রবীন
চিকিৎসক, অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ হুসেন সাহেব ইত্তেফাক পত্রিকার
মারফতে জানাইয়া দিয়াছেন যে, যাহারা আজীবন নিয়মিতভাবে রোজা পালন করে, সাধারণতঃ
তাহাঁর বাত, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না ।
সপ্তাহে একদিন রোজা পালন করা বহুমূত্র রোগীর পক্ষে উপকারী, রোজার উপবাসে খাদ্যের
সমতা রক্ষা হয় ও পাকস্থলী কিছুকালের জন্য বিরাম লাভ করে রোজাদারের অজীর্ণ না
হওয়ার ইহাই কারণ ।
রমজানের ফজিলত ও বরকত গ্রহণ করার জন্য মুসলমানদের উচিত এই মাসটি যথাযথভাবে পালন
করা। তারা রোজা রাখার পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি ইবাদত করা, দোয়া
করা এবং অন্যদের সেবা করা উচিত।
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস, রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব pdf, মাহে রমজানের গুরুত্ব,
৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ, রোজার তাৎপর্য ও শিক্ষা, রমজান মাসের ফজিলত ও আমল, রোজার
আয়াত ও হাদিস, রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য, রমজানের শ্রেষ্ঠ আমল, মাহে রমজানের
বিশেষ আমল, রমজান মাসের দোয়া, মাহে রমজানের ২০ আমল, রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব pdf,
মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব, রমজানের দোয়া ও আমল,