Infoজমি-জমাভূমি আইন

জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম

আসল দলিল চেনার উপায়, জাল দলিল চেনার ৯ উপায়, জাল দলিলের শাস্তি, জাল দলিল ফরেনসিক ল্যাবরেটরী পরীক্ষা সিআইডি বিডি, জাল দলিল ধরার উপায়, জাল স্ট্যাম্প চেনার উপায়, জাল দলিল আইন, জাল দলিলের মামলা, জাল দলিলের মামলা, জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম, স্বাক্ষর জালিয়াতির শাস্তি, জাল দলিল বাতিলের মামলা, জাল দলিল ধরার উপায়, জাল দলিল ফরেনসিক ল্যাবরেটরী পরীক্ষা সিআইডি বিডি, জাল ভোট দেওয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি কি, জাল দলিল চেনার উপায়, জাল দলিল ফরেনসিক ল্যাবরেটরী পরীক্ষা সিআইডি বিডি, জাল দলিলের শাস্তি, জাল দলিল চেনার উপায়, জাল দলিল আইন, দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম, হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম সাব কবলা দলিল বাতিল করার নিয়ম, জাল দলিল ধরার উপায়,

জাল দলিল কি

জাল দলিল নামটি শুনলে মনের মধ্যে প্রতারণা শব্দ ভেসে ওঠে । জাল দলিল বলতে এমন
একটি দলিলকে বোঝায় যেখানে আইনগতভাবে যার স্বাক্ষর করার কথা সে ব্যতীত অন্য কেউ
প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর করে এবং দলিল সম্পাদন করে জমি বিক্রি করে ।

জাল দলিল চেনার উপায়

জাল দলিল চিনতে হলে আগে জেনে নেই জাল দলিল কত প্রকারের হতে পারে । সাধারণত তিন
প্রকারে জাল দলিল হতে পারে ।

  • অনিবন্ধিত জাল দলিল
  • নিবন্ধিত জাল দলিল
  • সার্টিফাইড কপি

পুরাতন অনিবন্ধিত জাল দলিল ও প্রতিকার

১৯০৮ সালের রেজিঃ আইনে ১০০ টাকার কমের জমি রেজিস্ট্রেশন করার দরকার ছিল না । তাই
জমির দাম কম দেখিয়ে কিছু ভূমিদস্যু পুরাতন অনেক দলিল,দলিলের স্ট্যাম্প পেপার
সংগ্রহ করে বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে দলিলের লেখা মুছে ফেলে এবং নতুন করে
সেখানে দলিল লেখে এবং তা বিভিন্ন পোকামাকড়ের গর্তে রেখে দেয় এবং কিছু কিছু জায়গায়
ছিদ্র করে দেয় যাতে দলিলটি আসল এবং অনেক পুরাতন মনে হয় । এবং জমির মালিকের
মালিকানায় বিরোধ সৃষ্টি করে এবং টাকা আদায়ের চেষ্টা করে ।

প্রতিকার

জমি দখলে থাকলে এবং খতিয়ানে নাম থাকলে এই দলিলের কোণ দাম নাই । কিন্তু আমরা ভয়
পেয়ে তাঁদের সাথে সমঝোতা করি যা ঠিক না । আর তাঁদের মূল উদ্দেশ্যই কিছু টাকা আদায়
করা । এই দালালদের সুযোগ দিতে নেই ।

নিবন্ধিত জাল দলিল ও প্রতিকার

দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রেশন পাঁচটি বালাম বা রেজিস্ট্রি বই
থাকে 

  • ১। জায়গা জমি বিষয়ক নিবন্ধিত দলিল এই বালামে লেখা হয় । অছিয়তনামা ব্যতীত ।
  • ২। সাব রেজিস্টার যে সকল দলিল রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকার করেছেন তা লেখা হয় ২
    নাম্বার বালামে ।
  • ৩। উইল ও অছিয়তনামা লিখে রাখা হয় এই ৩ নাম্বার বালামে ।
  • ৪। জায়গা জমি বাদে অন্য দলিলে লিখে রাখা হয় এই ৪ নাম্বার বালামে ।
  • ৫। খামযুক্ত উইল রাখা হয় এই পাঁচ নাম্বার বালামে ।

দলিল নাম্বার দিয়ে যখন সাব-রেজিস্ট্রেশন অফিসে দেখলেন দলিলটি বালামে লেখা আছে তখন
সেটি নিয়ে সন্দেহ হলে তা নিবন্ধিত জাল দলিল ।

এই দলিল অনেক প্রকারের জাল হতে পারে

  • এজমালি জমি একক জমি হিসাব দলিল করে । একাধিক মালিক কিন্তু যেকোন একজন সমস্ত জমি
    বিক্রি করে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দেয় ।
  • পৈতৃক জমি ভাইবোনদের বাদ দিয়ে বিক্রি বা বাটোয়ারা দলিল করে নেয় ।
  • ওয়ারিশ সনদ জাল করে কাউকে বাদ দিলে তা জাল হবে ।
  • ওয়ারিশি জমির সকল অংশে সবাই তার প্রাপ্য অংশ হিসাবে মালিক । বিভিন্ন জায়গায় জমি
    থাকলে কেউ এককভাবে যেকোন একদিকে জমি বিক্রি করলে তা জাল হবে । যদিও তার প্রাপ্য
    অংশ ঠিক থাকে ।
  • মূল মালিকের পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া মালিক সেজে জমি বিক্রি করলে তা জাল হবে ।
    জাতীয় পরিচয়পত্র বা ছবি জাল করে বিক্রি হতে পারে ।
  • মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি বিক্রি করা হলে তা জাল হবে ।

প্রতিকার

এজমালি জমি বন্টন বা বাটোয়ারা ছাড়া না কেনা, আর সক্ল ওয়ারিশ/শরিক বিক্রি করলে
কেনা যায় । জমির বিক্রেতার পরিচয়পত্র ভালো করে যাচাই করা উচিৎ ।

ওয়ারিশ সনদে জমি বিক্রি, বাটোয়ার বা বন্টন দলিলে জমি বিক্রি করতে আসলে তাঁদের
ভাইবোন বা শরিকদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার ।

মৃত ব্যক্তির জমি কেনার আগে তার নিবন্ধিত মৃত্যুসনদ দেখে নেওয়া দরকার ।

জাল দলিল বাতিল করার উপায়

জাল দলিল সর্ম্পকে জানার ৩ বছরের মধ্যে আদালতে মামলা করে দলিলটি বাতিল করা যায় ।

দেওয়ানি আদালতে মামলা

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৯ ধারায় সম্পূর্ণ জাল দলিল এবং ৪০ ধারায় আংশিক জাল
দলিল বাতিলের মামলা করা যায় । মামলা নিজ জেলায় আইনজীবির মাধ্যমে করতে হবে এবং
দলিলের সম্পত্তির দামের ওপ্র ভিত্তি করে কোর্ট ফি দিতে হবে, যা সর্বোচ্চ ৪৬,০০০
টাকা হতে পারে ।

আদালতের ডিক্রি পেলা তার একটি কপি সাব-রেজিস্ট্রেশন অফিসে দিলে সাব রেজিস্টার সেই
দলিলের বালামে এই রায় লেখে রাখেন এবং বালামে লেখা দলিল কেটে দেন । তবে দেওয়ানি
ব্যবস্থায় শাক্তির বিধান নাই তাই সাথে ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে ।

ফৌজদারি আদালতে মামলা বা ফৌজদারি মামলা

জাল দলিল তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৫-৪৭৪ ধারায়
মামলা করা যায় । বিচারক চাইলে সেই মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন
বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিতে পারেন । তা ছাড়া মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের
বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠাতে পারেন । তদন্তে দলিল ভুয়া প্রমানীত হলে আসামিদের
বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দিতে পারবেন আদালত । দন্ডবিধির ৪৬৫ ধারায়
জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ঐ
ব্যাক্তি দুইবছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে
পারেন ।
দন্ডবিধির ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী আদালতে নথি বা সরকারি রেজিস্টার ইত্যাদিতে জালিয়াতির
ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যাক্তি বিচারালয়ের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী বলে
গণ্য কোন দলিল বা জন্মনামকরণ, দিয়ে বা শবসংক্রান্ত রেজিস্টার হিসাবে গন্য বা
সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন অথবা মামলার কোনো রায়ের কপি জাল করেন, তাহলে দায়ী
ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন , এ অপরাধ
জামিনযোগ্য নয় ।
দন্ডবিধির ৪৬৭ ধারানুয়ায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মূল্যবান জামানত, উইল প্রভূতি জাল
করেন, তাহলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন । ৪৬৭ ধারার অধীন
এরক্ম জালিয়াতিতে সহায়তার কারণেও দন্ডনীয় অপরাধ হতে পারে ।
দন্ডবিধির ৪৭৪ ধারা অনুয়ায়ী, ৪৬৬ ও ৪৬৭ ধারার অধীন প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির
জন্য সাত বছ পর্যন্ত কারাদন্ডসহ জরিমানার বিধান আছে ।

জাল দলিলের শাস্তি

জাল দলিল তৈরি প্রমাণিত হলে দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৫৬৫-৪৭১ বিভিন্ন ধারায় শাস্তির
বিধান আছে ।

সার্টিফাইড কপি/নকল/সহি মোহরার জাল দলিল

এটি আর একটি জালিয়াতি চক্রের প্রধান হাতিয়ার টাকা কামানোর । সাধারণত মূল দলিলের
দলিল নাম্বার বালাম নাম্বার ব্যবহার করে এই দলিল করা হয় । সাব রেজিস্ট্রি অফিসের
কিছু কর্মচারীদের যোগসাজসে এবং কখনো সাব-রেজিস্টারের সই, স্বাক্ষর, সিল জালিয়াতি
করে দলিল করা হয় । মূল জমির মালিকের মালিকানায় বিরোধ সৃষ্টি করে টাকা দাবি এই
দলিলের উদ্দেশ্য । আবার কখনো মূল বালাম বই টাকা দিয়ে ছিঁড়ে দেওয়া হয় যাতে এই নকল
দলিল যাচাই করার সুযোগ না থাকে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *