জমির মালিকানা বের করার উপায়
খতিয়ান দিয়ে মালিকানা যাচাই
খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় । যাকে সি এস খতিয়ান । এই সি এস খতিয়ান হতে জমিতে আজকে
পর্যন্ত কতজনের মালিকান পরিবর্তিত হয়েছে তা আমরা জানতে পারবো খতিয়ানের মাধ্যমে ।
এখানে আমাদের জানা ভালো যে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে সি এস এর পরে এস এ এবং এস এর
পরে আর এস জরিপ হয়েছে । এবং এই সকল জরিপ হতে আবার নামজারি খতিয়ান ও হতে পারে ।
নামজারি খতিয়ান ১০০ । এখন এই খতিয়ানের মন্তব্য কলামে আগত খতিয়ান । এখন কিন্তু আর
এই খতিয়ানের মন্তব্য কলামে আগত খতিয়ান লেখা থাকবে না । কারণ এটি রেকর্ডীয় খতিয়ান
। এখন আমাদেরকে দেখতে হবে সাবেক খতিয়ান ও হাল খতিয়ান আর এস রেকর্ডের যা আমরা ভূমি
অফিসে পাব । ধরলাম তা সাবেক ৩০০ নাম্বার এ স এ নামজারি খতিয়ান এখন এর মন্তব্য
কলামে লেখা থাকবে আগত খতিয়ান কত, ধরলাম তা এস এ ৪০০ নাম্বার খতিয়ান ।
এখন আবার দেখবো সাবেক খতিয়ান এবং হাল খতিয়ান ধরলাম সাবেক খতিয়ান ৫০০ সি এস
নামজারি । এভাবে খতিয়ান থেকে মালিকের নাম জমির পরিমাণ দেখে নিতে হবে আপনি যতটুকু
ক্রয় করেছেন মালিকান যতবার বদল হয়েছে জমি ততটুকু বা তার বেশি খতিয়ান আছে কিনা ।
কম থাকলে সেই কম জমি কেনা যাবে না । এভাবে খতিয়ানের মাধ্যমে মালিকানা যাচাই করা
যায় ।
দলিল নিয়ে মালিকানা যাচাই
রেজিষ্ট্রেশন শুরু হয় । যদিও এর আগে সামান্য কিছু দলিল রেজিষ্ট্রি করা হত । এই
দলিলের মাধ্যমে জমির মালিকনার বদল ঘটে । একটি দলিলে যাবতীয় কিছু লেখা না থাকলেও
অন্তত আগের দলিলের নাম্বার থাকে এবং মালিকের নাম থাকে । যে দলিল জমির দলিল
পরীক্ষা করবো সেই দলিল থেকে মালিকের নাম, জমির পরিমাণ জমির দাগ নাম্বার,খতিয়ান
নাম্বার জেনে নিতে হবে । এখন দলিলে আগের যে দলিল নাম্বার আছে সেটি পড়ে দেখতে হবে
মালিকের নাম কি জমির দাগ কত জমির পরিমাণ কত । এভাবে এই দলিলেও আগের জমির দলিল
নাম্বার থাকবে । এভাবে দলিলের মাধ্যমে মালিকানা যাচাই করা যায় ।
বায়া দলিল কি
-
আমাদের সকলের একটা ইতিহাস আছে । যেমন, আপনি, আপনার বাবা, আপনার দাদা, সেই
রকমভাবে জমিরও একটি ইতিহাস আছে । -
যেমন, আপনি এসেছেন আপনার বাবার থেকে, আপনার বাবা, আপনার দাদার থেকে এটাই বায়া
বা মাধ্যম । -
একটি জমির দলিলের মাধ্যমে প্রধানত মালিকানার বদল ঘটে, ১৯০৮ সালের
রেজিষ্ট্রেশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জমির দলিল রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হয়ে
যায় কিছু ব্যতিক্রম দলিল ছাড়া । -
এখন যদি ১৯০৮ সালের দলিলকে আমরা আদি দলিল ধরি এবং সেই জমিটি যদি ৪ বার
মালিকানা বদল হয় ২০১৯ পর্যন্ত তাহলে এখানে ৩টি বায়া দলিল এবং সর্বশেষটি
মালিকানা দলিল । তাহলে বায়া দলিল বলতে আগের মালিকের মালিকানা দলিল বোঝায়,
এটাই সহজ ভাবে আমরা বুঝতে পারি ।
জমির কোন দলিল কোথায় রেজিষ্ট্রি করবেন
-
রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ২৮ ধারা অনুসারে, স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল
দলিল ঐ সাব-রেজিস্টারের অফিসে রেজিষ্ট্রেশন করা যায়, যে সাব-রেজিস্টারের
অধিক্ষেত্রে ঐ দলিলে উল্লিখিত সম্পূর্ণ বা বেশিরভাগ সম্পত্তি (Major portion)
অবস্থিত । -
১৯৮৫ সালের আগে দলিল উল্লিখিত কিছু সম্পত্তি (Some Portion) যে
সাব-রেজিস্টারের অধিক্ষেত্রে ছিল, সেই সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ে দলিলটি
রেজিস্ট্রি করা যেত । কিন্তু The Regisration (Amendment) Ordinance,
১৯৮৫ এর সেকশন ২ এর মাধ্যমে Some portion এর স্থলে Major portion করা হয়ে । -
রেজিস্ট্রিশন আইনের এই ধারা অনুসারে, একটি দলিলের তফসিলে উল্লিখিত সকল
সম্পত্তি একই উপজেলায় অবস্থিত না হয়ে পৃথক উপজেলায় বা পৃথক জেলায় অবস্থিত
হলেও দলিলে উল্লিখিত বেশিরভাগ সম্পত্তি যে সাব-রেজিস্টারের অধিক্ষেত্রে
আছে, সেই সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করা যায় ।
অতিরিক্ত ফি প্রদান
পৃথক জেলার সম্পত্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এম বি -ফি পরিশোধ করতে হবে । ফি সরকার
গেজেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ।
নোটিশ প্রদান সাব-রেজিস্টার কে
করলে বা একই জেলায় অবস্থিত তার নিজ অধিক্ষেত্রের বাইরের দলিল রেজিস্ট্রি করলে
তাকে রেজিস্ট্রশন আইনের ৬৪ ধারা অনুসারে অপর সাব-রেজিস্টারের নিকট দলিলটির
রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত স্মারকলিপিসহ দলিলের উপরের পৃষ্টাষ্কন ও সার্টিফিকেট যদি
থাকে প্রেরণ করতে হবে । স্মারকলিপি প্রাপ্তির পর সাব-রেজিস্টার ১ নম্বর বালামে তা
লেখে রাখবেন ।
সাব-রেজিস্টার দলিলটির রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত স্মারকলিপি রেজিস্ট্রেশন আইনের ৬৫
ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা রেজিস্টার-এর নিকট প্রেরণ করবে ।
অস্থাবর সম্পত্তি হলে
সকল দলিল,উইল/অছিয়তনাম দলিল এবং দত্তকগ্রহণের ক্ষমতাপত্র পক্ষগণের পছন্দ অনুযায়ী
বাংলাদেশের যেকোন রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রির জন্য দাখিল করা যায় ।
আদালতের রায় বা ডিক্রি হলে
নকল প্রাপকের পছন্দ অনুযায়ী
কার্যালয়ে অথবা উক্ত স্থাবর সম্পত্তি যে সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ের কার্যালয়ের
অধীন সেই সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি করা যায় ।
জমির মূল দলিল পাবার নিয়ম
একটি রশিদ দেওয়া হয় । রেজিস্ট্রশন আইন ১৯০৮ এর ৫২ ধারার অধীন এ রশিদ দেওয়া হয়
বিদায় একে ৫২ ধারার রশিদ বলা হয় । এই রশিদে অন্য কোন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে পারেন
। দলিলে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠাঙ্কন, বালাম বহিতে দলিলের নকল করণ ও সূচি বহিতে সূচিকরণ
শেষ হলে ফেরত প্রদানের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিলসমুহের একটি তালিকা অফিসে নোটিশ
বোর্ড দেওয়া হয় । এরপর ৫২ ধারার রশিদ জমা দিয়ে দাখিলকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তি
মূল দলিল গ্রহণ করতে পারেন ।
দলিল ফেরত গ্রহণের নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে মূল দলিল ফেরত না
নিলে পরবর্তী প্রতি মাস বা তার অংশবিশেষের জন্য ৫ টাকা হারে জমিমানা আদায়ের বিধান
রয়েছে । তবে বিলম্ব যত মাসই হোক না কেন,জরিমানা ১০০ টাকার বেশি আদায়ের বিধান নাই
।
মূল দলিল ধ্বংস করা
রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার পর কোন দলিল দাবিবিহীন অবস্থায় দুই বছরের বেশি রেজিস্ট্রি
অফিসে পর থাকলে রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৮৫ ধারার বিধান মতে, সেগুলো ধ্বংস করে
ফেলা যায় । সুতরাং সময়মত মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ প্রয়োজন ।
দলিলের রশিদ হারিয়ে গেলে কি করবেন
আপনার নিজ নামে হলে সাব রেজিস্টার বরাবর আবেদন করলে সাব রেজিস্টার যদি আপনার
আবেদন গ্রহণ করেন এবং দলিলটি যদি বালামে লেখা হয়ে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট ফর্মে টিপ
ছাপ নিয়ে দলিলটি দিবেন আর না লেখা হলে সাদা কাগজে দলিলের একটি রশিদ সিল মেরে
দিবেন ।
যদি দলিল অন্য জনের নামে হয় প্রথমে থানায় জিডি করে তার কপি সহ আবেদন করতে হবে ।
সাব রেজিস্টার যদি সন্তুষ্ট হন তাহলে নতুন রশিদ বা দলিলটি প্রদান করবেন ।