শিক্ষক দিবসের শিক্ষকের বক্তব্য
আজকের বক্তৃতার বিষয় হল
শিক্ষক দিবসের শিক্ষকের সম্পর্কে একজন শিক্ষক কিভাবে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে
ইনোভেটিভ ওয়েতে বক্তৃতা
দিতে পারে সেই নিয়ে তৈরি আজকের এই লেখা তাই অনুরোধ করবো সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার
জন্য ।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
সুপ্রভাত, প্রধান শিক্ষক মহাশয়, আজকের প্রধান অতিথি মহাশয়, সকল আমরা সহকর্মীবৃন্দ
এবং স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা সকলকে জানাই শিক্ষক দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ।
আজ ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস এই দিনটি একজন ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের কাছেই খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন ।
এই দিনটি একজন রাজনীতিবিদ, বিচক্ষণ দার্শনিক এবং সর্বোপরি একজন মহান শিক্ষক এর
কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । তিনি হলেন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয়
রাষ্ট্রপতি ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান । ১৮৮৮ সালে আজকের দিনেই তামিলনাড়ুর এক
দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ।
তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র । জীবনের কোনো পরীক্ষাতেই প্রথম ছাড়া
দ্বিতীয় হননি । ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাস খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি লাভ করেন । এরপর তিনি তাঁর চাকরি জীবন শুরু করেন মাইসরো বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যাপনা দিয়ে ।
তারপর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও
অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন । ১৯৩১ সালে ইংরেজরা তাকে নাইটহুড উপাধিতে সম্মানিত
করেছিলেন । এই শিক্ষক দিবস শুরু হওয়ার পেছনে একটি ছোট্ট ঘটনা আছে ।
তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার কারণে, তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ ছাত্র ও ছাত্রী ছিলেন
। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওনার শিক্ষার্থীরা ও বন্ধুরা ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর
জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাতে তিনি সম্মতি প্রদান না করে বলেন তাঁর
জম্মদিনের পরিবর্তে, ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় তাহলে
তিনি বেশি খুশি হবেন । এই পরিপেক্ষিতে ১৯৬২ সালের পর থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটি
ভারতবর্ষে শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপন করা শুরু হয় ।
ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছেন যে, পুরো পৃথিবী একটি স্কুল, যেখানে আমরা নতুন
বা অন্য কিছু শিখি । আমাদের শিক্ষকরা শুধু আমাদের শেখান না, আমাদের ভালো মন্দের
পার্থক্য বুঝতেও সাহায্য করেন । তাঁর এই বক্তব্য নির্দেশ করে যে আমাদের জীবনে
শিক্ষক থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।
শিক্ষক সম্পর্কে কিছু কথা
প্রকৃতপক্ষে শিক্ষক দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য হল শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের
পারস্পরিক স্নেহের বন্ধন কে আরো দৃঢ় করা । কিন্ত একজন শিক্ষক হিসেবে আমার মনে হয়
এই বন্ধন আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে পড়ছে ।
এর কারণ বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নম্রতা, ভদ্রতা, সঠিক ব্যবহার, বড়দের
প্রতি সম্মান, নীতি শিক্ষার অভাব গভীরভাবে লক্ষ্য করতে পারি যা খুব দুঃখজনক ।
যদিও এর কারণ হিসেবে আমরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করতে পারি না ।
আমার মনে হয় এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ও বাবা মা ।
যদি আমরা আজ থেকে কিছু বছর পূর্বে যাই তাহলে দেখবো শিশু অবস্থায় আমরা নীতি শিক্ষা
পেয়েছি বাবা মা, দাদু, ঠাকুমার কাছে থেকে । কিন্তু এখনকার সময়ে বাবা মা বাচ্চাদের
উপর কম সময় দেন আর স্কুলের ওপর বেশি ভরসা করেন ।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু কথা
অন্য দিকে স্কুলের শিক্ষকেরা সবসময় চেষ্ঠা করে ছাত্রদের পুঁথিগত শিক্ষা দেওয়ার
মাধ্যমে তাঁদের একাডেমিক স্কোর বৃদ্ধি করা । এর ফলে তৈরি হয় এক শূন্যস্থান, সেই
শূন্যস্থান হলো নীতি শিক্ষার । যদি এই শূন্যস্থান নিয়েই শিশুরা এগিয়ে চলে তাহলে
হয়তো আমরা, প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক উন্নতি করব কিন্তু কখনোই এক ভালো সমাজ গড়ে
তুলতে পারবো না । তাই আমি একজন শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে বলতে চাই, আমাদের শিশুদের
মধ্যে পুঁথিগত শিক্ষার সাথে সাথে নীতিগত শিক্ষাকে সমভাবে প্ররণ করতে হবে । তাহলে
হয়তো আমরা শিক্ষক দিবসের প্রকৃত তাৎপর্যকে উদ্ভাসিত করতে পারবো ।
আমি আমার বক্তব্য বড় না করে সকলকে আমার ভালোবাসা জানিয়ে এখানেই শেষ করলাম ।
ধন্যবাদ