ইসলাম

মোনাজাত করার সঠিক নিয়ম

মহিলাদের মোনাজাত করার নিয়ম, সুন্দর মোনাজাত, মোনাজাতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ, মোনাজাত করার দোয়া, নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়, মোনাজাত শেষ করার নিয়ম, আল্লাহুম্মা দিয়ে মোনাজাত, মোনাজাত শেষ করার দোয়া, নামাজের মোনাজাতের দোয়া বাংলা, শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া, মহিলাদের মোনাজাত করার নিয়ম, মোনাজাত শেষ করার দোয়া, সুন্দর মোনাজাত, নামাজের মোনাজাত করার দোয়া, মোনাজাতের দোয়া সমূহ pdf, নামাজ শেষে মোনাজাতের দোয়া,

নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়

প্রিয়দর্শক আমরা সবাই দোয়া এবং আমল করে থাকি । এবং দোয়া এবং আমলের পরে মোনাজাত
করি । কিন্তু হয়তো আমাদের অনেকের দোয়া কবুল হয় আবার অনেকের দোয়া কবুল হয় না । এখন
কেন অনেক মানুষের দোয়া কবুল হয় না? এর কারণ হলো আমরা ঠিকমত মোনাজাত করতে পারি না
। এই মোনাজাত করার সঠিক নিয়ম জানি না ।
প্রিয়দর্শক তাই আমি আজকের এই পোস্টে মোনাজাত করার নিয়ম নিয়ম শুরুতে কি পড়বেন এবং
শেষে কি পড়বেন এবং কিভাবে দোয়া মোনাজাত করবেন তা আপনাদেরকে জানাবো ইনশাআল্লাহ ।
প্রিয়দর্শক আল্লাহ তায়লার কাছে যেকোন সময় মোণাজাত করা যায় । আপনি চাইলে দিনে,
রাতে, দাঁড়ানো অবস্থায়, শুয়ে, বসে ওযু করে বা অজু ছাড়া এমনকি গোসল ফরজ এমন
অবস্থায় বা নারীদের ঋতু অবস্থাতেও দোয়া করতে পারবেন ।
তবে ফরজ নামাজের পর পরই মোনাজাত করবেন না । আগে কিছু সুন্নতি জিকির করে এরপরে
ইচ্ছা হলে একাকী মোনাজাত করতে পারেন । অথবা ফরজ সুন্নত সব নামাজ শেষ করে এরপরে
মোনাজাত করবেন ।
উল্লেখ্য অনেকে মনে করেন নামাজের পরে মোনাজাত করতেই হবে । এটা ঠিক না । নামাজের
পরে আপনার ইচ্ছা হলে মোনাজাত করবেন না হলে করবেন না সেটা আপনার ইচ্ছা । মোনাজাত
করা নামাজের অংশ না ।
তবে ভালো নামাজের পরে দোয়া- দূরুদ জিকির আসকার তাসবিহ তাহলিল এবং আপনার
প্রতিদিনের আমল করার পরে যদি আপনি মোনাজাত করেন তাহলে ভালো । তবে মোনাজাতকে কেউ
নামাজের অংশ মনে করবেন না ।
সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ হয়ে যায় । অজু অবস্থায় পশ্চিম দিকে ফিরে দোয়া
করা মুস্তাহাব ফিরেও  মোনাজাত করা যাবে । মোনাজাতে দুই হাত তোলা মুস্তাহাব ।
আল্লাহ তাআলা এটা পছন্দ করে যে, মানুষ ভিক্ষুকের মত তার দরবারে বিনীতভাবে হাত
তুলে দোয়া করবে । এইভাবে দোয়া করলে সেটা আল্লাহ কবুল করে নেন ।
See also  আরবি ৭ দিনের নাম বাংলায়
সালমান আল ফারসি (রাঃ) আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
তোমাদের রব লজ্জাশীল ও দানশীল । তার বান্দা যখন তার নিকট দুই হাত তুলে প্রার্থনা
করে তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন! (মুসানাদে আহমদ তিরমিজি, আবু
দাউদ)
প্রিয়দর্শক মোনাজাত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলোঃ-
মোনাজাত করতে হবে বিনীতভাবে নিচুস্বরে, মন দৃঢ আশা নিয়ে যে, আল্লাহ সবকিছু করতে
পারেন আর তিনি অবশ্যই আমাদের দোয়া কবুল করবেন ।
আমি তো পাপী আল্লাহ কবুল করে কিনা? এরকম সন্দেহ থাকলে বা আল্লাহ কবুল করবেন না!
আমাকে ক্ষমা করবেন না আল্লাহ সম্পর্কে এমন খারাপ ধারণার নিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ
সেই দোয়া কবুল করেন না ।
বান্দা যতই পাপী হোক সে আন্তরিক তওবা করে জান্নাতুল ফেরদৌসের আশা রেখেই দোয়া করবে
। বিপদ যত বড়ই হোক আল্লাহ সব ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন এই আশা নিয়েই দোয়া করতে হবে ।
আর যেই দোয়া করা হচ্ছে সেই দিক মনোযোগ রেখে বুঝে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে । উদাসীন
হয়ে অন্তর থেকে না চেয়ে শুধু মুখে উচ্চারণ করে গেলে বা আন্তরিক দোয়া না করে
দেখানো দোয়া করলে, আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করেন না । কান্নাকাটি করে বিনীতভাবে দোয়া
করলে আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন । এবং বান্দার এ দোয়া আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি কবুল
করবেন ।
মোনাজাত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলোঃ-
মোনাজাতের প্রথমে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা দিয়ে শুরু করতে হবে । এ বলে প্রশংসা করা
যেতে পারে যে,
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবা-তু ।
অর্থঃ সমস্ত অভিবাদন সকল সালাত ও পবিত্র কাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য ।
অথবা এটা বলে আল্লাহর প্রশংসা করা যেতে পারে ,
আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসীরান য়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি
অর্থঃ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যে প্রশংসা পবিত্রতা ও বরকতপূর্ণ ।
অথবা মোনাজাতের শুরুতে এটা বলে বলে আল্লাহর প্রশংসা করা যাবে যে, 
See also  পবিত্র হজের সময় ডায়াবেটিক রোগীদের যা মানা জরুরি
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক ।
প্রিয়দর্শক এরকম যেকোনো এক বা একাধিক বা এরকম আল্লাহর জন্য প্রশংসামূলক অন্যবাক্য
বলা যাবে মোনাজাতের শুরুতে আর এটা বলা খুবই প্রয়োজনমূলক একটি কাজ মোনাজাতের জন্য
প্রিয়দর্শক মোনাজাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলোঃ-
আল্লাহর প্রশংসার পরে রাসুল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পড়তে হবে । ছোট বড় যেকোনো দুরুদ
পড়া যাবে আপনার যেটা ভালো লাগে । সর্বোত্তম দরুদ হচ্ছে দরুদে ইব্রাহিম । যেটা
আমরা নামাজ পড়ি । এটা না পড়লে ছোট অন্য দুরুদ পড়া যাবে যেমনঃ-
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম আ’লা নবিয়্যিনা মুহাম্মদ ।
অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ
করুন ।
প্রিয়দর্শক একদিন রাসূল (সাঃ) দেখলেন এক ব্যক্তি দোয়া করছে,কিন্তু সে দোয়াতে
আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলের প্রতি দুরুদ পাঠ করেনি । রাসুল (সাঃ) তাকে
লক্ষ্য করে বললেন, সে তাড়াহুড়ো করছে । অতঃপর সে আবার প্রার্থনা করল ।
রাসুল (সাঃ) তাকে অথবা অন্যকে বললেনঃ-
যখন তোমাদের কেউ দোয়া করে তখন সে যেন প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তার গুনাগুন
দিয়ে দোয়া শুরু করে । অতঃপর রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠ করে, এরপর তার যা ইচ্ছা
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে । (আবু দাউদ সহীহ হাদিস)
মোনাজাতের আরেকটি পদ্ধতি হলোঃ
নিজের পছন্দ মত নিজের জন্য বা অন্যের জন্য দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোনো কল্যাণের
জন্য দোয়া করতে হবে । সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি প্রার্থনা করার এই দোয়াটা
রাসুল (সাঃ) খুব বেশি বেশি করতেন । প্রিয়নবী (সাঃ) এর অধিকাংশ দোয়াই হত এরকম যে,
আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা
আযাবান্নার ।
অর্থঃ- হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কন্যাণ দাও এবং পরকালে জীবনেও কল্যাণ
দান করো । আর আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও ।
প্রিয়দর্শক এই দোয়াটির ক্ষেত্রে মনে রাখবেন,
See also  ২০২৪ সালের রমজান মাসের ক্যালেন্ডার
বিঃদ্রঃ আল্লাহুম্মা আতিনা অথবা, রাব্বানা আতিনা এই দুইভাবেই পড়া যায় ।
সহীহ মুসলিমের অন্য হাদিসে আছে, আনাস (রাঃ) আনহু যখন একটি দোয়া করার ইচ্ছা করতেন
তখন এই দোয়া করতেন । আবার যখন বিভিন্ন দোয়া করার ইচ্ছা করতেন তখন তার মাঝেও এই
দোয়াটিই পাঠ করতেন । (সহিহুল বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি শরীফের হাদিস)
প্রিয়দর্শক এছাড়াও জীবিত বা মৃত পিতামাতার জন্য দোয়ার মধ্যে এ দোয়া বেশি বেশি
করতে হবেঃ
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা
অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো । যেইরকম দয়া তারা আমাকে
শিশু অবস্থায় করেছিল ।
প্রিয়দর্শক এখন আপনি সংক্ষেপে মোনাজাত করার নিয়মটি জেনে নিনঃ-
আপনারা যখন মোনাজাত করবেন, যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাইবেন তার শুরুতে আল্লাহ
তা’লার প্রশংসা করার পর কয়েকবার দুরুদ শরীফ পাঠ করে নিবেন । যে দরুদ পারেন ।
সবচেয়ে ভালো হয় দরুদে ইব্রাহিম পড়লে । তাই কয়েকবার দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করার পরে ।
আপনি আল্লাহর কাছে কাঙ্খিত বিষয় নিয়ে দোয়া করবেন ।
আল্লাহ তায়ালার কাছে খাস দিলে, আল্লাহর কাছে মাথানত করে কান্নাকাটি করে আল্লাহর
কাছে দোয়া করবেন । তারপরে দোয়ার শেষেও আপনি কয়েকবার দরুদ শরীফ পাঠ করে নিবেন ।
এইভাবে দোয়া করলে আপনার দোয়া নিশ্চিত কবুল হবে ইনশাল্লাহ ।
আর হ্যা, একটা কথা মনে রাখবে আপনি দোয়া করে কোন তাড়াহুড়া করবেন না । নিরাশ হবেন
না । যে কেন আপনার দোয়া কবুল হচ্ছে না । এরকম কোন তাড়াহুড়া করবেন না ।
আপনি যেহেতু আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন আপনার দোয়া কোন না কোনভাবে আল্লাহর তাআলা
কবুল করবেন এতে কোণ সন্দেহ নেই । কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অতি দয়ালু ।
আমি আশা করি, আজকের পোস্ট যেহুতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই অনুরোধ করবো পোস্ট সেয়ার
করে সবাইকে শিখার সুযোগ করে দিন ।